বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের কাজ করা অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ

ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মাথায় তিনি ডব্লিউএইচও থেকে তাঁর দেশের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে ঘোষণা দেনছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সঙ্গে কাজ করা অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) কর্মকর্তা জন নেঙ্গাসং এ–সংক্রান্ত একটি নথি গত রোববার রাতে সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠান। নথিতে সিডিসির সব কর্মীদের প্রতি ডব্লিউএইচওর সঙ্গে তাঁদের সহযোগিতা অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বলা হয় ‘নতুন নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা’ করতে।

যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডব্লিউএইচও থেকে তাঁর দেশকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে গত সপ্তাহে এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন। তবে এটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়নি। সংস্থাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার বিষয়টি কার্যকর হতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ কাজ বন্ধ করার এ নির্দেশনা বিস্ময়কর। এর ফলে আফ্রিকায় এমপক্স ও মারবার্গভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ ও এ খাতে বিনিয়োগ এবং এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত হুমকি মোকাবিলা করার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে গৃহপালিত পশু–পাখির মধ্যে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার ওপর সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলো যখন নজর রাখছে, তখন এমন নির্দেশনা দেওয়া হলো।

জন নেঙ্গাসংয়ের নথির এটি অনুলিপি দেখেছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস। নথিতে বলা হয়, কাজ বন্ধের এ নির্দেশনা ডব্লিউএইচওর সঙ্গে কাজ করে চলা সিডিসির কারিগরি দল, সমন্বয়কেন্দ্রগুলো, উপদেষ্টা পর্ষদগুলো, সহযোগিতামূলক চুক্তি বা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে যুক্ত সব কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি বা ভার্চ্যুয়াল—উভয় ধরনের যোগাযোগ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। সিডিসির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা ডব্লিউএইচওর কার্যালগুলো পরিদর্শনে যেতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করা হয় নির্দেশনায়।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডব্লিউএইচও থেকে তাঁর দেশকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে গত সপ্তাহে এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন। তবে এটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়নি। সংস্থাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার বিষয়টি কার্যকর হতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। তা ছাড়া, সংস্থাটির সঙ্গে চলতি অর্থবছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যে আর্থিক দায়বদ্ধতা পূরণের বিষয় রয়েছে, তা–ও মেটাতে হবে। সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করতে হলে এক বছর আগে একটি নোটিশও দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ কাজ বন্ধ করার এ নির্দেশনা বিস্ময়কর। এর ফলে আফ্রিকায় এমপক্স ও মারবার্গ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ ও এ খাতে বিনিয়োগ এবং এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত হুমকি মোকাবিলা করার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে।

ওই নির্দেশনার বাইরে ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন ফেডারেল স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে অন্তত এ মাসের শেষ পর্যন্ত জনসাধারণের সঙ্গে অধিকাংশ যোগাযোগ বন্ধ রাখারও নির্দেশ দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়ে একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণের বিরুদ্ধে ডব্লিউএইচওর সঙ্গে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করেন ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জেফ্রে ক্লজনার। তিনি বলেন, ‘ডব্লিউএইচওর সঙ্গে যোগাযোগ ও বৈঠক বন্ধ করা এক বড় সমস্যা। লোকজন মনে করেছিলেন, ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ঘটবে। কিন্তু এটি যে এত দ্রুত ঘটবে, তা কখনো ভাবেননি তাঁরা।’

আরও পড়ুন

‘ডব্লিউএইচওর সঙ্গে যোগাযোগটা দ্বিমুখী’ উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ডব্লিউএইচও ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা একে অপরের দক্ষতা দিয়ে উপকৃত হন। এ সহাযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন পরীক্ষা ও চিকিৎসা সম্পর্ক জানার পাশাপাশি রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া বিষয়ে তথ্য পেতে সহায়তা করে। মার্কিন নাগরিকদের দেশে ও দেশের বাইরে সুরক্ষিত করতে এটি আমাদের সাহায্য করে।

ডব্লিউএইচওর সঙ্গে যোগাযোগ ও বৈঠক বন্ধ করা এক বড় সমস্যা। লোকজন মনে করেছিলেন, ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ঘটবে। কিন্তু এটি যে এত দ্রুত ঘটবে, তা কখনো ভাবেননি তাঁরা।
জেফ্রে ক্লজনার, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

ওই নথি সম্পর্কে কথা বলার অনুমতি না থাকা একজন মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিডিসি থেকে নিষেধাজ্ঞা–সংবলিত এ নথি পাঠানোর ঘটনা সঠিক। এসব বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে ডব্লিউএইচওর একজন মুখপাত্র জানতে চেয়েছেন।

এদিকে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবাবিষয়ক দপ্তরের কর্মকর্তাদের মন্তব্য চাওয়া হলে তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।

আরও পড়ুন