যেভাবে ব্রাজিলে দাঙ্গা উসকে দেন ট্রাম্প-মিত্ররা
নজিরবিহীন দাঙ্গার সাক্ষী হলো ব্রাজিল। দুই বছর আগে ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলের ঘটনার সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে ব্রাসিলিয়ার পরিস্থিতিরও শিউরে ওঠার মতো মিল পাওয়া যায়। অবশ্য দুটি ঘটনার মধ্যে গভীর যোগসূত্রও রয়েছে। খবর বিবিসির
গত বছরের অক্টোবরে ব্রাজিলের নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শেষে স্টিভ ব্যাননের পডকাস্টে একজন অতিথি বলেন, ‘পুরো ঘটনারই আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।’ ব্যানন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের প্রধান কৌশলবিদ ছিলেন।
প্রথম দফার নির্বাচনে কেউ ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। তখনো চূড়ান্ত ফলাফল জানার ধারে-কাছে কেউ নেই। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির ভিত্তিহীন গুজব ছড়ান ব্যানন। কয়েক সপ্তাহ ধরেই তিনি কাজটি করছিলেন।
ব্যানন ও তাঁর অতিথিরা পডকাস্টের কয়েকটি পর্ব এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বেহাত নির্বাচন’ ও ছায়াশক্তির অভিযোগ তোলেন। ব্যানন ‘ব্রাজিলীয় বসন্ত’ হ্যাশট্যাগ চালু করেন। এমনকি বলসোনারো ফলাফল মেনে নেওয়ার পরও তাঁর সমর্থকদের উৎসাহ দিতে থাকেন তিনি।
সাবেক এই হোয়াইট হাউস কৌশলবিদ ট্রাম্পের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেরই একজন, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টিতে একই কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
ওয়াশিংটনে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ঘটনার মতো এসব ভুয়া প্রতিবেদন এবং ভিত্তিহীন গুজব ব্রাজিলে নিজেদের দাবির সপক্ষে হামলাকারীদের সরকারি ভবনের জানালা ভাঙচুর ও ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে উসকে দিয়েছে।
‘যা যা করার করো’
ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার আগের দিন পডকাস্ট শ্রোতাদের উদ্দেশে ব্যানন বলেছিলেন, ‘আগামীকাল ক্ষুব্ধ জনতার আকস্মিক তাণ্ডব শুরু হতে যাচ্ছেব্যানন।’ ওই হামলার তদন্তে গঠিত কংগ্রেসনাল কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার আদেশ মানতে অস্বীকার করায় তাঁকে চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আপিল নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ব্রাজিলে গতকাল রোববারের দাঙ্গার ঘটনায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্রে আসতে শুরু করেছে। এরপরও গুজব ছড়ানো ট্রাম্পের অন্য উপদেষ্টাদের মতো ব্যাননও অনুতপ্ত নন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গেটাতে (Gettr) তিনি বারবার লিখেছেন, ‘লুলা নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছেন... ব্রাজিলীয়রা এটা জানে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ‘চুরি বন্ধ করো’ নামের একটি আন্দোলনের সূচনা হয়। উগ্রপন্থী এই গোষ্ঠীটির নেতাদের একজন হিসেবে উত্থান হয় আলি আলেক্সান্ডারের। ব্রাজিলের বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘যা যা করার করো।’ ব্রাজিলের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথাও দাবি করেছেন তিনি।
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি
ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসভবনে গত নভেম্বরে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট এবং বলসোনারোর ছেলে এদুয়ার্দো বলসোনারোর মধ্যে একটি বৈঠকের পর বলসোনারো ও ট্রাম্পের অনুসারীদের রাজনৈতিক যোগসূত্রের বিষয়টি সামনে আসে।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সফরে ব্যানন ও ট্রাম্পের উপদেষ্টা জ্যাসন মিলারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন এদুয়ার্দো বলসোনারো।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের নির্বাচনী ফলাফল অস্বীকারকারী দলবাজরা নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে শোরগোল তৈরির ওপর জোর দিয়েছিলেন। একইভাবে ব্রাজিলে তারা ভোট গণনার ইলেকট্রনিক মেশিন নিয়ে সন্দেহ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
রোববার দাঙ্গাবাজদের বহন করা একটি ব্যানারে ইংরেজি এবং পর্তুগিজ ভাষায় লেখা ছিল, ‘আমরা সোর্স কোড চাই।’ বলসোনারোকে হারাতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কোনো না কোনোভাবে প্রোগ্রামিং করা হয়েছিল কিংবা হ্যাক করা হয়েছিল, এমন গুজবের প্রতি ইঙ্গিত করে তাঁরা এটা লিখেছেন।
নির্বাচনী ফলাফল অস্বীকার নিয়ে গুজব ছড়ানো ব্রাজিলের কিছু সুপরিচিত টুইটার অ্যাকাউন্ট নির্বাচন এবং ইলন মাস্ক কোম্পানিটির মালিকানা নেওয়ার পর পুনর্বহাল করা হয়। এর আগে এসব অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ ছিল।
ব্রাজিলে টুইটারের নিজস্ব কিছু কর্মী ‘রাজনৈতিকভাবে খুবই পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে মাস্ক নিজেই মত দিয়েছিলেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি এবং কোনো তথ্য-প্রমাণও দেননি।
ব্রাজিলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি উসকে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প-বিরোধীদের কয়েকজন তাৎক্ষণিক সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ও তাঁর উপদেষ্টাদের দায়ী করেছেন।
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য ও ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার তদন্ত কমিটির সদস্য জেমি রাসকিন এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গাবাজদের পর নিজেদের একইভাবে ফ্যাসিস্ট হিসেবে তুলে ধরেছেন’ ব্রাজিলের বিক্ষোভকারীরা।
ব্যানন ও আলেক্সান্ডারের বক্তব্য নিতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল বিবিসি।