যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ভারতীয় মার্কিনরা উদ্বিগ্ন
ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রমেই বেশি আশাবাদী হয়ে উঠছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন তাঁরা। নতুন এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘দ্য ২০২৪ ইন্ডিয়ান-আমেরিকান সার্ভে’ নামের এ জরিপ গত অক্টোবরে পরিচালনা করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিকবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘কার্নেগে এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’ ও ইন্টারনেটভিত্তিক জরিপ প্রতিষ্ঠান ‘ইউগভ’। জরিপে ভারতীয়-মার্কিন নাগরিকদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ক্রমেই গভীর, কিন্তু মাঝেমধ্যে বাধাগ্রস্ত হওয়ার মধ্যেই গত বছর দেশ দুটিতে হয়ে গেল গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। উভয় দেশের সম্পর্কে সাম্প্রতিকতম উত্তেজনার শুরু ভারতীয় ধনকুবের ও ব্যবসায়ী গৌতম আদানিকে একটি ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিযুক্ত করা এবং সে দেশের মাটিতে এক হত্যার ষড়যন্ত্রে দিল্লির সমর্থন থাকার অভিযোগ ওঠার মধ্য দিয়ে।
উভয় দেশের সম্পর্কে সাম্প্রতিকতম উত্তেজনার শুরু ভারতীয় ধনকুবের ও ব্যবসায়ী গৌতম আদানিকে একটি ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিযুক্ত করা এবং সে দেশের মাটিতে এক হত্যার ষড়যন্ত্রে দিল্লির সমর্থন থাকার অভিযোগ ওঠার মধ্য দিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ৫০ লাখের বেশি ভারতীয় বংশোদ্ভূত অধিবাসীর উদ্দেশে জরিপে কয়েকটি মূল প্রশ্ন করা হয়। এগুলো হলো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক যেভাবে সামলেছেন, তা তাঁরা কীভাবে দেখেন? ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কি তাঁরা অধিকতর ভালো বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করেন? ২০২৪ সালের নির্বাচন-পরবর্তী ভারতের যাত্রাপথকে তাঁরা কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বমূলক এ অনলাইন জরিপে ১ হাজার ২০৬ প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয়-মার্কিন নাগরিকের মতামত গ্রহণ করা হয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, তা হলো—
ভারত প্রশ্নে ট্রাম্প না বাইডেন
ভারত-মার্কিন সম্পর্ক সামাল দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের প্রথম দফার প্রশাসনের চেয়ে বাইডেনের প্রশাসনকেই বেশি সমর্থন করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনরা।
জরিপকালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পরিবর্তে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের আসাকেই পছন্দ করার কথা জানান ওই ভারতীয়রা।
তবে রিপাবলিকান দলের সমর্থক, এমন ভারতীয় মার্কিনদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ জানান, তাঁদের বিশ্বাস, ট্রাম্পই ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশি ভালো ছিলেন। বিপরীতে, ডেমোক্র্যাট সমর্থক ভারতীয় মার্কিনদের মধ্যে এ মতের পক্ষে ছিলেন মাত্র ৮ শতাংশ, অর্থাৎ তাঁদের ৯২ শতাংশই ট্রাম্পের বিপক্ষে।
অন্যদিকে, এ বিষয়ে ভারতীয় মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের অর্ধেক বাইডেনের পক্ষে সমর্থন দেন। এ মতের পক্ষে ছিলেন ১৫ শতাংশ রিপাবলিকান।
ভারতীয় মার্কিনদের মধ্যে অধিকাংশই ডেমোক্র্যাট সমর্থক হওয়ায় জরিপে বাইডেনের পক্ষেই তাঁদের সমর্থন বেশি দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে দুই নেতাই একে অপরের নেতৃত্বের গুণগান করেন। তবে ট্রাম্প তাঁর দেশের পণ্যে ভারতের উচ্চ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করে বলেন, ‘এটা এক বড় সমস্যা।’
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন
ইসরায়েল না ফিলিস্তিন—কোনটি সমর্থন করেন, এমন প্রশ্নে ভারতীয় মার্কিনদের মধ্যে দলীয়ভাবে সমর্থনের দিক থেকে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়েছে। ডেমোক্র্যাট সমর্থক ভারতীয় মার্কিনরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি সহানুভূতি দেখিয়েছেন আর রিপাবলিকানরা ইসরায়েলকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রতি ১০ জনের ৪ জন মনে করেন, গাজা যুদ্ধে বাইডেন অতিমাত্রায় ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ ভারতীয় মার্কিনের বিশ্বাস, ভারত সঠিক পথে চলেছে। ৪ বছর আগের তুলনায় এ সংখ্যা ১০ শতাংশ বেশি। একইসংখ্যক অংশগ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির সক্ষমতার অনুমোদন দেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের মতো নিহত হন বলে দাবি দেশটির কর্তৃপক্ষের। এ ছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় জিম্মিদের অনেককে এরই মধ্যে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
অপর পক্ষে, হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে টানা প্রায় ১৫ মাস গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলে। ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ভারতের ভাবমূর্তি
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ ভারতীয় মার্কিনের বিশ্বাস, ভারত সঠিক পথে চলছে। ৪ বছর আগের তুলনায় এ সংখ্যা ১০ শতাংশ বেশি।
একইসংখ্যক অংশগ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির সক্ষমতার অনুমোদন দেন। এর বাইরে ১০ জনের ৪ জন মনে করেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন ভারতকে আরও বেশি গণতান্ত্রিক করেছে। এ নির্বাচনে মোদির দল বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
এদিকে জরিপে আরও দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও খালিস্তান আন্দোলনের নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকই অবগত নন।