যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিশংসন তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি।
অভিশংসন তদন্ত শুরুর বিষয়টি নিয়ে গোপনে আলোচনা চলছিল। এ ব্যাপারে কয়েক সপ্তাহ ধরে ইঙ্গিতও দেওয়া হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রকাশ্য ঘোষণা এল।
প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান স্পিকার গতকাল মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্তের কথা জানান।
ম্যাকার্থি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ আছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আরও তদন্ত দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে তাঁর পদ থেকে অপসারণের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন। অভিযোগ শুনানির পর প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাব পাসের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের দরকার হয়।
প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হলে বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে যাবে। সিনেটে অভিশংসন বিচারে প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত ও অপসারণের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট লাগবে।
বাইডেনের পূর্বসূরি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন। প্রথমবার ২০১৯ সালে, দ্বিতীয়বার ২০২১ সালে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রতিনিধি পরিষদে দুবার অভিশংসিত হন। তখন প্রতিনিধি পরিষদ ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে দুবারই তিনি তৎকালীন রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সিনেটে খালাস পান। ফলে তাঁকে পদচ্যুত হতে হয়নি।
অভিযোগ কী
ম্যাকার্থি তাঁর ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন।
বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের ‘সন্দেহজনক’ ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়টিকে সামনে আনেন ম্যাকার্থি। একই সঙ্গে ছেলের ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কে জানাশোনার বিষয়ে মিথ্যা বলার জন্য বাইডেনকে অভিযুক্ত করেন তিনি।
ম্যাকার্থির অভিযোগ, বাইডেন পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন শেল কোম্পানি (নিষ্ক্রিয় কোম্পানি) থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এই লেনদেনকে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ম্যাকার্থির ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের একজন তথ্যদাতার অভিযোগ অনুযায়ী, বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি ঘুষ নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ছেলের ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য নিজের সরকারি দপ্তরকে ব্যবহার করেছিলেন।
হান্টার বর্তমানে তাঁর বিদেশি ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য করসংক্রান্ত অপরাধের জন্য ফেডারেল তদন্তের অধীন রয়েছেন।
ম্যাকার্থি আরও অভিযোগ করেন, অসদাচরণের অভিযোগ তদন্তকারী বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রেসিডেন্টের পরিবার বিশেষ সুবিধা পেয়েছে।
ম্যাকার্থির ঘোষণার পর এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে দ্রুত নিন্দাসূচক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ইয়ান সামস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকানরা ৯ মাস ধরে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আসছেন। কিন্তু তাঁরা প্রেসিডেন্টের কোনো অন্যায়ের প্রমাণ পাননি। রিপাবলিকানদের এই তৎপরতাকে চরম রাজনীতির সবচেয়ে বাজে দিক হিসেবে অভিহিত করেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র।
বাইডেনকে কি অপসারণ করা যাবে?
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ব্যবধান খুব বেশি নয় (২২২-২১২)।
প্রতিনিধি পরিষদে কিছু মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সদস্য আছেন। তাঁরা বাইডেনের অভিশংসনপ্রক্রিয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে নিজেদের অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ফলে খোদ রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদেই অভিশংসন প্রস্তাব পাস হওয়া নিয়ে ঘোর সন্দেহ আছে।
প্রতিনিধি পরিষদে এখন পর্যন্ত মোট তিনজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছেন। ট্রাম্প ছাড়া বাকি দুজন হলেন অ্যান্ড্রু জনসন (১৮৬৮ সাল) ও বিল ক্লিনটন (১৯৯৮ সাল)। তবে তিনজনের কেউ সিনেটে দোষী সাব্যস্ত হননি।
সিনেটে বর্তমানে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১-৪৯) আছে। বাইডেনকে অভিশংসনের বিষয়টি যদি কোনো কারণে সিনেটে যায়, তাহলে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে তা নিশ্চিতভাবেই খারিজ হবে।