বাইডেন সরে গেলে কমলা হ্যারিসে নজর ডেমোক্র্যাটদের, হারাতে পারবেন কি ট্রাম্পকে
নিউ অরলিন্সে গত শনিবার বিকেলে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে বসা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বলছিলেন নিজের জীবনের গল্প। সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে অনুভূতির কথাও।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সেকেন্ড–ইন–কমান্ড হিসেবে গত সাড়ে তিন বছরে এমন অনেক অনুষ্ঠানে কমলা হ্যারিস নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্টের তুলনায় সেসব অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের ভিড় দেখা যেত কমই। এখন এ চিত্র পাল্টেছে।
বাইডেনকে হয় অপ্রতিরোধ্যভাবে জেতা উচিত, নয়তো অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া উচিত; যিনি তা করতে পারবেন।
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বাইডেনকে নিয়ে তাঁর দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে এ মুহূর্তে উদ্বেগের শেষ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সর্বশেষ নির্বাচনী বিতর্কে ৮১ বছর বয়সী বাইডেনের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে তাঁদের উদ্বেগ–হতাশা বেড়েছে। এ অবস্থায় কমলা হ্যারিসের অনুষ্ঠানে বাড়ছে সংবাদকর্মীদের ভিড়।
সপ্তাহান্তে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমঞ্চে ও যেখানেই ভ্রমণে গেছেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা এবং প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থিতা থেকে বাইডেনের সরে যাওয়া ও তাঁর (কমলা) নিজেরই প্রার্থী হওয়া উচিত কি না—সেসব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন কমলা। যদিও এ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করা এড়িয়ে গেছেন তিনি।
নিউ অরলিন্সে নিজের নির্বাচনী উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎ পথ তৈরি করা নিয়ে আলোচনায় কমলা হ্যারিস সমালোচকদের কথায় কান না দিতে শ্রোতাদের পরামর্শ দেন।
গত ২৭ জুন সিএনএন আয়োজিত ওই ‘বিপর্যয়কর’ বিতর্কের পর থেকে বারবারই বাইডেনের আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিয়ে আসছেন কমলা। যুক্তি দিচ্ছেন, বিতর্ক মঞ্চের ৯০ মিনিটের পারদর্শিতা দিয়ে প্রেসিডেন্টের সক্ষমতার বিচার করা ঠিক হবে না। অনড় বাইডেনও। জোর দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তিনি করবেনই।
এদিকে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর চাপ যতই বাড়ছে, ততই ডেমোক্রেটিক পার্টির কিছু প্রভাবশালী নেতা তাঁর জায়গায় ৫৯ বছর বয়সী কমলাকে প্রার্থী করতে এক ছাতার নিচে সমবেত হচ্ছেন।
কমলা হ্যারিসকে বাইডেনের স্থলাভিষিক্ত করা নিয়ে বক্তব্যে অবশ্য কিছু ডেমোক্র্যাট নেতার ভ্রু কুঁচকেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাইডেনের কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগীও। তাঁদের মতে, হ্যারিস ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাট দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। হোয়াইট হাউসে তাঁর কাজের রেকর্ডও খুব সন্তোষজনক নয়।
এসব নেতার একজন ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেস সদস্য অ্যাডাম শিফ। গত রোববার এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাইডেনকে হয় অপ্রতিরোধ্যভাবে জেতা উচিত, নয়তো অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া উচিত।’ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়লে কমলা হ্যারিস খুব ভালোভাবে জিততে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কমলাকে নিয়ে এমন বক্তব্যে অবশ্য কিছু ডেমোক্র্যাট নেতার ভ্রু কুঁচকে গেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাইডেনের কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগীও। তাঁদের মত, কমলা ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। হোয়াইট হাউসে তাঁর কাজের রেকর্ডও খুব সন্তোষজনক নয়।
এই নেতাদের বিপরীতে ডেমোক্রেটিক পার্টির জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা শিফ ছাড়াও সাউথ ক্যারোলাইনার কংগ্রেস সদস্য জিম ক্লেবার্ন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উত্তরসূরি করার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। তাঁরা চান, দলের চাপে বাইডেন যেন নিজ অবস্থান থেকে সরে আসেন।
কমলার সমর্থকেরা কিছু জরিপের ইঙ্গিত তুলে ধরে বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাইডেনের তুলনায় ভালো করবেন তিনি। তাঁদের যুক্তি, জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতা হিসেবে কমলার স্বীকৃতি রয়েছে, আছে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সক্ষমতা ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা। তাঁকে প্রার্থী করা হলে, নির্বাচনের আগে এই চার মাসের পথচলা ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য মসৃণ হতে পারে।
শেষমেশ প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার টিকিট কমলাকে দেওয়া হলে সেটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নারী রাজনীতিকের জন্য উল্লেখ করার মতো এক ঘটনা। খুব বেশি দিনও হয়নি যে হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কমলাকে রাজনৈতিকভাবে একজন দুর্বল ব্যক্তি হিসেবেই দেখতেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজেও কমলার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তাঁর কাজ উন্নতির দিকে।’
তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির দীর্ঘদিনের কৌশলবিদ ও কমলার যোগাযোগ পরিচালক জেমাল সিমনস বলেছেন, অনেক দিন ধরে অবমূল্যায়নের শিকার তিনি। বিবিসিকে জেমাল বলেন, ‘কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্টের সহকর্মী হিসেবে থাকুন বা প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার টিকিট পান—যেটিই হোক, রিপাবলিকান ও ট্রাম্পশিবির থেকে তাঁকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।’
সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সতর্ক করে বলেছেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দৌড়ের জন্য রিপাবলিকানদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তাঁর মতে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে কমলা জোরালো দাবিদার হতে পারেন।
বিভিন্ন জরিপও অনেকটা একই কথা বলছে। সিএনএনের সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলে বলা হয়েছে, আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিপরীতে বাইডেনের চেয়ে কমলা ভালো করবেন। জরিপে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাইডেন ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন। আর কমলার ব্যবধান মাত্র ২ পয়েন্ট। নারী ভোটারদের মধ্যে কমলার প্রভাব রয়েছে।
ভারতীয় মা ও জ্যামাইকান বাবার সন্তান কমলা। তাই কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিন ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তরুণ ভোটারদের মধ্যে কমলার জনপ্রিয়তা ভালো। জরিপেও এমনটা উঠে এসেছে। শেষ পর্যন্ত কী ঘটতে যাচ্ছে, সেটা দেখার জন্য এসব ভোটারের অনেকেই এখন অপেক্ষায় আছেন। কমলা তাঁদের মধ্যে গতির সঞ্চার করতে পারেন।
তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, বাইডেন প্রার্থিতা থেকে সরে গেলে ডেমোক্রেটিক দল নিয়ে নিরপেক্ষ ভোটারদের মন বদলে যেতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে ভোটের বাক্সে।
নিউ অরলিন্সের বাসিন্দা ইয়াম ক্রিস্টিয়ান টুকার। ৪১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি একটি ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালান। তিনি বলেন, একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রেসিডেন্ট পদে জিততে পারবেন কি না, সেটা নিয়ে সংশয় আছে। তবে তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে কাউকেই ভোট দিতে চান।
উইসকনসিনের ৬৭ বছর বয়সী ভোটার গ্রেগ হোভেল বলেন, ‘আমি মনে করি, কমলা একজন ভালো প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। তবে আমি এখনো এটাও মনে করি, বাইডেন জিততে পারবেন।’