যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের কাজ কী, ট্রাম্প কি আসলেই এটি বিলুপ্ত করতে পারবেন
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করার কাজ শুরু করতে এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিভাগকে ভেঙে দেওয়া ট্রাম্পের রক্ষণশীল রিপাবলিকান পার্টির দীর্ঘদিনের লক্ষ্য। তবে এটিকে পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হয়তো সম্ভব হবে না। কেননা, এর জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর শিক্ষা বিভাগ এরই মধ্যে তাদের জনশক্তি অর্ধেক কমিয়ে আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়ার আগেই ট্রাম্প শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করার ইচ্ছার কথা ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ধনকুবের ইলন মাস্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন। সেখানে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি শিক্ষা বিভাগকে বিলুপ্ত করতে চাই। শিক্ষাকে অঙ্গরাজ্যগুলোয় ফিরিয়ে দিতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা বিশ্বজুড়ে তাদের সমবয়সী শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে।’
ফেডারেল শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত হলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে উল্লেখ করে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, এতে শিক্ষা খাতে খরচ অর্ধেক কমবে। ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী বক্তব্যেও এ বিভাগ বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সংস্থাটির বিরুদ্ধে ট্রাম্প ও তাঁর মিত্রদের অভিযোগ, এটি তরুণদের বর্ণবাদ, যৌনতা ও রাজনৈতিক বিষয়ে দীক্ষিত করছে।
১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ।
১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ দেশটির সরকারি স্কুলগুলোর অর্থায়ন তদারকি ও শিক্ষার্থীদের ঋণ দেখভাল এবং স্বল্প আয়ের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।
শিক্ষা বিভাগ কী করে, কী করে না
কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ নিয়ে একটা সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলো পরিচালনা ও পাঠ্যসূচি নির্ধারণ করে। এ দুই কাজের দায়দায়িত্ব আসলে অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় ডিস্ট্রিক্ট কর্তৃপক্ষের।
প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্কুলগুলোর অর্থায়ন তদারকি ও শিক্ষার্থীদের ঋণ কর্মসূচির দেখভাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্প আয়ের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে শিক্ষা বিভাগ।
প্রতিবন্ধিত্বের শিকার ও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা অন্য শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতেও তহবিলসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে এ বিভাগ।
কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত স্কুলগুলোতে বর্ণ ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য রোধে প্রণীত নাগরিক অধিকার আইনগুলোও কার্যকর করে শিক্ষা বিভাগ।
বাজেট কত ও কতজন কাজ করেন
২০২৪ অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ২৩৮ বিলিয়ন (২৩ হাজার ৮০০ কোটি) ডলার। এটি কেন্দ্রীয় বাজেটের ২ শতাংশের কম।
সংস্থাটিতে কর্মরত প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কর্মী। ট্রাম্প প্রশাসন জনশক্তির এ আকার কাঁটছাট করতে চায়। সংস্থাটিও ইতিমধ্যে জনবল অর্ধেক কমানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোয় সরকারি অর্থায়নের বেশির ভাগই আসে অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলোর তরফ থেকে।
গবেষকদের সংগঠন ‘এডুকেশন ডাটা ইনিশিয়েটিভ’ ২০২৪ সালে জানিয়েছিল, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বসাকল্যে আনুমানিক ৮৫৭ বিলিয়ন (৮৫ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার খরচ করে। শিক্ষার্থীপিছু এ খরচ ১৭ হাজার ২৮০ ডলারের সমান।
ট্রাম্প কি শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করতে পারবেন
ট্রাম্প একা শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করতে পারবেন না। এটি বিলুপ্ত করতে ট্রাম্পকে যে শুধু কংগ্রেসের অনুমোদন পেতে হবে তা–ই নয়, উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ সদস্যের মধ্যে ৬০ জনের সমর্থন, অর্থাৎ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আদায় করতে হবে।
সিনেটে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির (৫৩–৪৭ আসন) সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। তাই ট্রাম্পের পরিকল্পনা কার্যকর করতে তাঁকে আরও অন্তত সাতজন সদস্যের সমর্থন দরকার; তাঁর জন্য অসম্ভবই বটে।
ট্রাম্প একা শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করতে পারবেন না। এটি বিলুপ্ত করতে ট্রাম্পকে যে শুধু কংগ্রেসের অনুমোদন পেতে হবে তা-ই নয়, উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ সদস্যের মধ্যে ৬০ জনের সমর্থন, অর্থাৎ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আদায় করতে হবে।
এমনকি নিম্নকক্ষ রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি পরিষদেও প্রয়োজনীয় সমর্থন পেতে হিমশিম খেতে হতে পারে।
গত বছর ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের সময় শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করার বিষয়টি সংশোধনী হিসেবে অন্য একটি বিলে সংযুক্ত করে তোলা হয়েছিল প্রতিনিধি পরিষদের। তখন বিলের বিপক্ষে পরিষদের সব ডেমোক্র্যাট সদস্যের সঙ্গে যোগ দেন ৬০ জন রিপাবলিকান সদস্য। এ অবস্থায় বিলটি পাস হতে ব্যর্থ হয়।
এরপরও ট্রাম্প তাঁর শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করার পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, সেখানে শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমোহনকে শিক্ষা বিভাগ বন্ধ এবং এ বিভাগের কর্তৃত্ব অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকারের কাছে হস্তান্তরের কাজ ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
শিক্ষা বিভাগের নেওয়া যেসব সেবা, কর্মসূচি ও সুবিধার ওপর মার্কিন শিক্ষার্থীরা নির্ভরশীল, সেগুলো কার্যকর ও নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান রাখতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই আদেশে। তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনা কবে থেকে কার্যকর হবে, সেই দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের উদ্যোগ শুধু সিনেটে বাধার সম্মুখীন হওয়াই নয়, আইনি চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়বে।
সম্প্রতি ট্রাম্প ফেডারেল সরকারের আকার (জনবল ও খরচ) কমাতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তাঁর এ কর্মসূচি কার্যকরে সহায়তা করছেন ইলন মাস্ক। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়া ছাড়াও নানা আইনি বাধায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার হাজার হাজার কর্মীকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এখন নজরে আছেন শিক্ষা বিভাগের কর্মীরা।