নিউইয়র্কে দালাইলামার সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠক, উদ্বেগে চীন

তিব্বতের নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা দালাই লামাছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা নিউইয়র্কে তিব্বতের নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা দালাই লামার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল বুধবার এ বৈঠক হয়। বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা তিব্বতে মানবাধিকার নিশ্চিতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এসব জানিয়েছে।

৮৯ বছর বয়সী দালাই লামার সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের ঘটনাটিতে চীন ক্ষুব্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চীন তাঁকে বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলে মনে করে এবং তার সঙ্গে যেকোনো দেশের কর্মকর্তাদের যোগাযোগের বিরোধিতা করে থাকে।

তিব্বতে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৫৯ সালে ভারতে চলে যান দালাই লামা। গত জুনে হাঁটুর চিকিৎসার জন্য তিনি নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের পর এটি তাঁর প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, দালাই লামার সঙ্গে দেখা করতে নিউইয়র্কে গেছেন মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ও তিব্বতবিষয়ক বিশেষ সমন্বয়ক আজরা জেয়া। হোয়াইট হাউসের মানবাধিকারবিষয়ক পরিচালক কেলি রাজুকও তাঁর সঙ্গে যোগ দেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষ থেকে দালাই লামার সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন জেয়া। তিব্বতে মানবাধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের নিজস্ব ঐতিহাসিক, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।

তিব্বতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা মোকাবিলায় মার্কিন তৎপরতার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন জেয়া। চীন ও দালাই লামার মধ্যে নতুন করে সংলাপ শুরু করার ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছেন তিনি।

ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেনগিয়ু বলেছেন, দালাই লামার সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের ব্যাপারে চীন ‘প্রচণ্ড রকমের উদ্বিগ্ন’। তিনি দালাই লামার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে দালাই লামা সফর শুরু করার আগে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের একটি দল ভারতে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছিল। দালাই লামার উত্তরসূরি বেছে নিতে চীনকে প্রভাব খাটাতে দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে তারা।

গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষরিত একটি আইনের কঠোর বিরোধিতা করেছে চীন। এ আইনের আওতায় তিব্বত স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে চলা বিরোধের সমাধান করতে বেইজিংকে চাপ দেওয়া হয়েছে। চীন তখন বলেছে, তারা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে দৃঢ়ভাবে সুরক্ষা দেবে।

আরও পড়ুন

আগে যখন দালাই লামা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন, তখন তিনি দেশটির প্রেসিডেন্টসহ মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে দালাই লামার সাক্ষাৎ হয়নি।

দালাই লামার সঙ্গে বৈঠক কিংবা কথা না বলায় ২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন বাইডেন। কারণ, ট্রাম্প ছিলেন তিন দশকের মধ্যে একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যাঁর সঙ্গে দালাই লামার কথা হয়নি। একে অসম্মানজনক বলে উল্লেখ করেছিলেন বাইডেন।

বুধবারের বৈঠকটি এমন সময়ে হলো, যখন বাইডেন ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনে বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।