সাজানো-গোছানো একটি জাদুঘর। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মরদেহের সঙ্গে যে রাইফেলটি পাওয়া গিয়েছিল, সেটি সাজানো আছে সেখানে। আছে ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ব্যবহৃত চামড়ার জ্যাকেট। কিন্তু চাইলেও আপনি সেই জাদুঘরে যেতে পারবেন না। ঘুরে দেখতে পারবেন না এসব নিদর্শন। কেননা এই জাদুঘরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। ‘গোপন’ এই জাদুঘর পরিচালনা করে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। খবর বিবিসির।
জাদুঘরটির অবস্থান ভার্জিনিয়ায় সিআইএর সদর দপ্তরে। সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থাটির ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কয়েকজন সাংবাদিক জাদুঘরটি দেখার সুযোগ পান। তাঁদের মধ্যে বিবিসির সাংবাদিকও ছিলেন। তবে তাঁদের সঙ্গে সে সময় সার্বক্ষণিকভাবে ছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীরা।
প্রায় ৬০০টি বিরল নিদর্শন আছে জাদুঘরটিতে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় মার্কিন গোয়েন্দাদের ব্যবহৃত কিছু যন্ত্রও আছে সেখানে। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা গোপন রাখা যেত। আরও আছে সিগারেটের প্যাকেটের ভেতর লুকানো গোপন ক্যামেরা, সঙ্গে ক্যামেরাযুক্ত কবুতরের মডেলসহ বিভিন্ন নিদর্শন। সবই স্নায়ুযুদ্ধের সময় মার্কিন গোয়েন্দারা ব্যবহার করতেন। জাদুঘরে থাকা কিছু নিদর্শন এখনো বিভিন্ন অভিযানে ব্যবহার করেন মার্কিন গোয়েন্দারা।
সাজানো-গোছানো একটি জাদুঘর। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মরদেহের সঙ্গে যে রাইফেলটি পাওয়া গিয়েছিল, সেটি সাজানো আছে সেখানে। আছে ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ব্যবহৃত চামড়ার জ্যাকেট। কিন্তু চাইলেও আপনি সেই জাদুঘরে যেতে পারবেন না। ঘুরে দেখতে পারবেন না এসব নিদর্শন। কেননা এই জাদুঘরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ।
পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ২০১১ সালে সিআইএর গোপন অভিযানে নিহত হন আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন। তাঁর রাইফেলের সঙ্গে তিনি যেই বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন, সেটার একটি মডেল আছে ওই জাদুঘরে। পাশেই রাখা আছে সাদ্দাম হোসেনের একটি চামড়ার জ্যাকেট।
জাদুঘরের পরিচালক রবার্ট জেড বায়ার বলেন, ‘এসব নিদর্শনের থ্রিডি দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের নীতিনির্ধারকদের, গোয়েন্দাদের যেকোনো অভিযানের সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হয়।’ তাঁর মতে, লাদেনকে হত্যার অভিযানের অভিজ্ঞতা চলতি বছর আফগানিস্তানের কাবুলে আল-কায়েদার সর্বশেষ শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির ওপর সিআইএর অভিযান চালাতে সাহায্য করেছে।
কাবুলে জাওয়াহিরির গোপন আস্তানায় অভিযানের আগে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেই ভবনের একটি মডেল তৈরি করেছিল সিআইএ। পরে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামনে উপস্থাপন করা হয়। অভিযানটি কীভাবে হবে, বাইডেনকে সেই বিষয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এরপরই মেলে অভিযানের অনুমোদন। জাওয়াহিরির গোপন আস্তানার মডেলটিও রাখা আছে জাদুঘরটিতে।
১৯৪৭ সালের জুলাইয়ে সিআইএর যাত্রা শুরু। এরপর স্নায়ুযুদ্ধ, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, উপসাগরীয় যুদ্ধ, নিউইয়র্কে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলা, ইরাক-আফগানিস্তান যুদ্ধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মোকাবিলা করতে হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটিকে। জাদুঘরটিতে সময়ক্রম ধরে এসব ঘটনার বিভিন্ন নিদর্শন সাজানো আছে।
গোপন এই জাদুঘরে সাধারণ মানুষের প্রবেশে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখানে কারা যান, সেই প্রশ্ন উঠেছে। মূলত জাদুঘরটি ঘুরে দেখেন সিআইএর লোকজন। আসেন রাজনীতিক-নীতিনির্ধারকেরাও। তাঁরা যেমন সিআইএর অভিযানের সাফল্যের বিষয়টি দেখেন, তেমনি কিউবায় বিভিন্ন সময় পরিচালিত অভিযানে ঐতিহাসিক ব্যর্থতা, ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে না পাওয়ার ব্যর্থতার নিদর্শনও দেখেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাটির মনোযোগ অনেকাংশে সন্ত্রাস দমনের দিকে ঝুঁকে যায়। এই হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের দেওয়া বিভিন্ন আলামত জাদুঘরে রাখা আছে। এ ছাড়া কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রোর ওপর পরিচালিত সিআইএর অভিযান ও ইরাক যুদ্ধ নিয়ে জাদুঘরটিতে আলাদা দুটি গ্যালারি রয়েছে।
জাদুঘরটির দ্বিতীয় অংশে গত শতকের ষাটের দশকে সমুদ্র তলদেশে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবমেরিনে অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযানের জন্য মার্কিন গোয়েন্দারা সোভিয়েত সাবমেরিনের মডেল বানিয়েছিলেন। এমনকি ওই সাবমেরিনের ক্রুদের পোশাক, ব্যবহৃত অ্যাশ ট্রের হুবহু মডেল বানানো হয়েছিল। এসব জাদুঘরে রাখা আছে।
গোপন এই জাদুঘরে সাধারণ মানুষের প্রবেশে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখানে কারা যান, সেই প্রশ্ন উঠেছে। মূলত জাদুঘরটি ঘুরে দেখেন সিআইএর লোকজন। আসেন রাজনীতিক-নীতিনির্ধারকেরাও। তাঁরা যেমন সিআইএর অভিযানের সাফল্যের বিষয়টি দেখেন, তেমনি কিউবায় বিভিন্ন সময় পরিচালিত অভিযানে ঐতিহাসিক ব্যর্থতা, ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে না পাওয়ার ব্যর্থতার নিদর্শনও দেখেন।
সিআইএ জাদুঘরের পরিচালক রবার্ট বলেন, ‘এটা শুধু ইতিহাসভিত্তিক জাদুঘর নয়, এটা প্রয়োগগত জাদুঘরও। সিআইএর কর্মকর্তা-কর্মীরা এখানে এসে ইতিহাসের নানা নিদর্শন দেখেন। সেখানে সাফল্য ও ব্যর্থতা—দুই ধরনের ইতিহাসের মুখোমুখি হন তাঁরা। আমরা নিশ্চিত যে তাঁরা এখান থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান তাঁদের ভবিষ্যতের কাজে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁরা ভবিষ্যতের অভিযানে সফল হওয়ার প্রেরণা পান।’
তবে জাদুঘরটিতে সিআইএর বিতর্কিত ও সমালোচিত কিছু কর্মকাণ্ডের নিদর্শন তুলনামূলক কম দেখা গেছে। এর মধ্যে আছে ১৯৫৩ সালে ইরাকের তৎকালীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে সিআইএ ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর যৌথ অভিযান এবং ২০০১ সালের পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাস দমনের নামে বিভিন্ন দেশ থেকে ধরে আনা ব্যক্তিদের বন্দী রাখা ও তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো। এসব ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচিত হয়েছে।