গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাঁবু তৈরি করে অবস্থান কর্মসূচিও চালিয়ে যাবেন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোয় কয়েক সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনপন্থীদের টানা বিক্ষোভ চলছে। আটক করা হয়েছে কয়েক শ বিক্ষোভকারীকে। এতেও তাঁদের দমানো যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে গত রোববার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ক্যাম্পাসগুলোয় চলমান বিক্ষোভ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে।
১৯৬০–এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইসরায়েলবিরোধী এই আন্দোলন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সেই বিক্ষোভে ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল।
এবারও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলে আসছেন, তাঁদের এই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিক্ষোভকে তাদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত বলে মনে করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশের হাতে শিক্ষার্থীদের ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। সর্বশেষ গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিদ্যাপীঠ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের অভিযোগে ১০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর এই বিক্ষোভ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
গার্ডিয়ান–এর খবরে বলা হয়, গতকাল সোমবার নিউইয়র্কের ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কের ওপরে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের বিশেষ বাহিনী স্ট্র্যাটেজিক রেসপন্স গ্রুপকে (এসআরজি) ড্রোন নিয়ে সতর্ক টহল দিতে দেখা যায়। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ‘ইসরায়েলের বোমা, অর্থ দিচ্ছে এনওয়াইইউ, আজ কত শিশু হত্যা করেছ’, এমন প্রচারপত্র বিলির সময় ১২০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত শনিবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবশ্য শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেনি। তবে অন্য কয়েকটি ক্যাম্পাসে নতুন করে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখান থেকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে।
সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮০ জনকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গত সপ্তাহ থেকে চলমান এই বিক্ষোভে ৯০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিক্ষোভ দমনে পুলিশকে ব্যবহার করা নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। হোয়াইট হাউস থেকে বলা হচ্ছে, ক্যাম্পাসগুলোয় চলমান বিক্ষোভ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। বিক্ষোভের বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, ‘সব মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের প্রতি আমরা (মার্কিন প্রশাসন) শ্রদ্ধাশীল। তবে বিক্ষোভ থেকে ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক যেসব ভাষা আমরা শুনতে পেয়েছি, তা নিন্দনীয়। ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য ও সহিংসতার হুমকির নিন্দা জানাই।’
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে শনিবার আটক হন গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জিল স্টেইন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের মারমুখী আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তিনি। আটক হওয়ার আগে তিনি সিএনএনকে বলেন, এটা বাক্স্বাধীনতার বিষয়। খুবই জটিল একটি বিষয়। কিন্তু দাঙ্গা পুলিশ এনে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বিক্ষোভের মুখে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির হামবোল্ডট ক্যাম্পাসসহ কয়েকটি ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চলছে অনলাইন ক্লাস।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হবে।
গত রোববার ইয়েল ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, যাঁরা ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়েছেন এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র উৎপাদনে সহযোগিতা থেকে সরে আসতে বলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করাসহ গ্রেপ্তার করতে বলা হবে। ইয়েল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমর্থন করলেও নীতিমালা ভঙ্গের বিষয়টি সহ্য করবে না।
গত রোববার পুলিশ ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার পর সেখানকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে বলে দাবি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এই বিক্ষোভের বিষয়টিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নজর রাখছেন। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি রোববার এবিসি নিউজকে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় যুদ্ধ নিয়ে শিক্ষার্থীদের গভীর অনুভূতির কথা জানেন। তিনি এটা বোঝেন। একে সম্মান করার কথা তিনি অনেকবার বলেছেন।
জন কারবি বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারকে তিনি সম্মান করেন। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানানোর ও জনগণের সঙ্গে তা ভাগাভাগি করার অধিকার সবার আছে। তবে তা হতে হবে শান্তিপূর্ণ।