নির্বাচনী প্রচারে স্বামীর পাশে থাকবেন জিল বাইডেন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‘বিপর্যয়কর’ বিতর্কের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাশে পেয়েছেন। ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন স্বামীর হয়ে সম্মুখসারিতে থেকেই লড়ছেন। বিশেষ করে যখন নির্বাচন থেকে বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর দাবি উঠেছে, তখন স্বামীর পাশে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন জিল।
এ বিষয়ে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বিষয়ের অধ্যাপক টমি ভিজিল বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি (জিল বাইডেন) পণ্ডিতদের মতো প্রভাবশালী। তাঁর মতামত সম্ভবত অন্য কারও চেয়ে বাইডেনের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
টমির মতে, জিলের সমর্থন ছাড়া বাইডেনের পক্ষে নির্বাচনী দৌড়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব না।
জিলের বয়স ৭৩ বছর। কমিউনিটি কলেজের অধ্যাপক তিনি। গতকাল সোমবার বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ সাময়িকী তাদের আগস্ট সংস্করণের প্রচ্ছদ প্রকাশ করেছে। এই প্রচ্ছদে সাদা রঙের গাউনে দেখা গেছে জিলকে।
তবে জিলের এই ছবি ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের ‘বিপর্যয়কর’ বিতর্কের বহু আগে গত এপ্রিলে তোলা। জিলকে নিয়ে ভোগের নিবন্ধটিও গত এপ্রিলে লেখা।
তবে পরে নিবন্ধে একটি সম্পাদকীয় নোট যুক্ত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাইডেন-ট্রাম্পের বিতর্কের পর যখন বর্তমান প্রেসিডেন্টের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি উঠেছে, তখন ফার্স্ট লেডি জিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা হয়েছে।
বিতর্ক প্রসঙ্গে জিল বাইডেন ভোগ সাময়িকীকে বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চার বছরের মেয়াদকালকে ওই ৯০ মিনিট (বিতর্কের সময়) দিয়ে বিবেচনা করে না পরিবার।
জো ও জিল বাইডেন ৪৭ বছর ধরে সংসার করছেন। এর আগে এক সপ্তাহান্তে দাতাদের সঙ্গে বৈঠকে জিল বলেন, ‘ওই পদে (প্রেসিডেন্ট) জো শুধু একজন সঠিক ব্যক্তি নন, বরং তিনি একমাত্র ব্যক্তি।’
ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের বিতর্কের পর গত বৃহস্পতিবার অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কনটেন্টে দেখা যায়, বিতর্ক শেষে সিএনএনের স্টুডিওতে কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসতে স্বামীকে হাত ধরে সহায়তা করছেন জিল।
এর পরের দিনগুলোয় নর্থ ক্যারোলাইনায় স্বামীর নির্বাচনী প্রচারে দেখা যায় জিলকে। এ সময় তিনি এমন একটি পোশাক পরে ছিলেন যেটায় ‘ভোট’ লেখা ছিল।
জো ও জিল বাইডেনের বিয়ে হয় ১৯৭৭ সালে। এর কয়েক বছর আগে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাইডেন তাঁর প্রথম স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে হারান। বেঁচে যান দুই ছেলে বাউ ও হান্টার বাইডেন। এ ট্র্যাজেডির ধাক্কা সামলে ওঠার পর ক্যানসারে আক্রান্ত বাউ বাইডেনের মৃত্যু হয়।
একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা পুরো বাইডেন পরিবারকে বিপর্যস্ত করে তোলে। পরে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন হান্টার। কয়েক বছরের লড়াইয়ের পর সেরেও ওঠেন। বিপর্যয়ের এই সময়টায় পরিবারের কেন্দ্রে থেকে হাল ধরেন জিল।
বিয়ের কয়েক বছর পর জো ও জিলের ঘরে জন্ম নেয় তাঁদের মেয়ে অ্যাশলি বাইডেন। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিদের নিয়ে ভরে ওঠে পুরো সংসার। সামলে ওঠে পুরো পরিবারটি। তরতরিয়ে এগিয়ে যায় বাইডেনের রাজনৈতিক জীবন। এখন জিলের সমর্থনের শক্তিতে বলীয়ান জো বাইডেন দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন।
জিল যখন প্রথম হোয়াইট হাউসে আসেন, তখন তিনি পেশায় শিক্ষক। ওয়াশিংটনের পাশেই একটি কলেজে ইংরেজি পড়ান। ফার্স্ট লেডি হওয়ার পরও নিজের পেশাজীবন অটুট রাখেন তিনি। এর আগে কোনো ফার্স্ট লেডির ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়নি।
নিজের পেশাজীবন ও ফার্স্ট লেডির সরকারি দায়িত্ব সমানতালে সামলে গেছেন জিল। কলেজে পড়িয়েছেন, বড়দিনের উৎসবে হোয়াইট হাউস সাজিয়েছেন, নৈশভোজ আয়োজন করেছেন।