তারা আমাদের সন্তানদের যন্ত্রণা দিচ্ছে: ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী তল্লাশি নিয়ে সতর্ক যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো

ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের ওকলাহোমা শহরে অভিবাসীদের প্রত্যর্পণবিরোধী বিক্ষোভ। ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তারা তাঁর নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ‘গণ–বিতাড়ন’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শিকাগো শহরে কাজ শুরু করেছেন। তাঁদের তল্লাশি অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার বেড়ে গেছে।

অভিবাসন কর্মকর্তারা তৎপরতা শুরুর পর অভিভাবকেরা বাচ্চাদের আগেভাগে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন অথবা সন্তানকে নিতে কয়েক ব্লক দূরে গাড়ি পার্ক করে অপেক্ষা করছেন। বিগত কয়েক বছরে এই শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজার হাজার নতুন অভিবাসী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। যেসব পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বাইরে বের হতে আতঙ্কবোধ করছেন, ফোন করে তাঁদের খোঁজখবর নিচ্ছেন শিক্ষকেরা।

উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে নথিপত্রহীন বাবা–মায়ের সন্তান শিক্ষার্থীদের কাছে ক্লাস শেষে ‘আপনার অধিকার সম্পর্কে জানুন’ সম্পর্কিত তথ্য বিতরণ করছেন শিক্ষকেরা।

শিক্ষকেরা বলছেন, ‘তারা আমাদের সন্তানদের, আমাদের শিশুদের যন্ত্রণা দিচ্ছে। তাদের ক্ষতি করছে।’

শহরজুড়ে প্রশাসনের এই সাঁড়াশি অভিযানের চাপ কমে আসতে কত দিন চলবে, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা ভাবছেন।

ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের অভিবাসন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। স্কুল ক্যাম্পাসে অভিযানের বিরুদ্ধে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের দীর্ঘদিনের সুরক্ষা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আবাসিক এলাকা ও শহরতলিতে শত শত কেন্দ্রীয় এজেন্ট মোতায়েন করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ স্থান বজায় রাখতে গিয়ে শিক্ষকদের নাভিশ্বাস উঠছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

কিছু কিছু শহর ও অঙ্গরাজ্য অভিবাসন নীতিমালা নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। শিক্ষক ও নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো অভিবাসীসহ শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি শিক্ষা সহজলভ্য রাখার সংগ্রাম করছে। ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে প্রস্তাবিত এক নীতিমালার একাংশে বলা হয়েছে, স্কুলে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। সেখানকার শিক্ষক ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

‘সহায়ক পরিবেশ থাকলেই কেবল শিশুদের বীজগণিত শেখার ক্ষমতা থাকতে পারে,’ এমন মন্তব্য করে ন্যাশনাল নিউকামার নেটওয়ার্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আলেজান্দ্রা ভাজকেজ বাউর বলেন, ‘তাই সব শিক্ষক এরই মধ্যে একেকজন অ্যাডভোকেটে (অভিবাসীদের অধিকার রক্ষার কণ্ঠস্বরে) পরিণত হয়েছেন।’

ন্যাশনাল নিউকামার নেটওয়ার্ক অভিবাসী শিশু এবং পরিবারগুলোকে সহায়তা করতে কাজ করে, এমন শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের একটি জাতীয় জোট।

অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের কাছে অভিবাসী বিতাড়ন–সম্পর্কিত নানা কঠিন প্রশ্ন ও ভয়ের জবাব দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। আলেজান্দ্রা ভাজকেজ বাউর বলেন, ‘শিশুরা অভিবাসন–সংক্রান্ত অবস্থান (ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস) দেখে না। দেখে বন্ধুবান্ধবদের।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘ শিক্ষার্থীরা যখন শ্রেণিকক্ষ থেকে তাদের সহপাঠীদের টেনে বের করে দিতে দেখে, তখন কী ঘটে? তাহলে এসব বিষয় আপনি তাদের কাছে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?’

অভিবাসীদের ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে, ২ ফেব্রুয়ারি
ছবি: রয়টার্স

শিকাগোতে সরকারি স্কুলগুলোতে নথিপত্রহীন অভিবাসী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের পরিকল্পনার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন শিক্ষকেরা। শিক্ষক ও প্রশাসকেরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা সমন্বয় করেছিলেন এবং নিজেদের আইনি অধিকার (সম্পর্কিত জ্ঞান) ঝালাই করে নিয়েছিলেন।

তা সত্ত্বেও বাসা থেকে বের হতে হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে পড়া অভিভাবক ও শিশুদের সহায়তা করতে স্কুলকর্মীরা তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানান অ্যাশলে পেরেজ। তিনি শিকাগোর ব্রাইটন পার্ক এলাকার স্কুলের একজন লাইসেন্স পাওয়া ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মী।