ফিলিস্তিনিদের সমর্থন: যুক্তরাষ্ট্রে তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার, ভিসা বাতিল
যুক্তরাষ্ট্রের এক তুর্কি ডক্টরেট শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও তাঁর ভিসা বাতিল করেছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর নাম রুমেসা ওজতুর্ক (৩০)। বোস্টনের কাছ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দেশজুড়ে যে প্রবণতা আমরা লক্ষ করছি, তাতে তাঁর (রুমেসা) বাক্স্বাধীনতার অধিকারচর্চাই তাঁকে আটক করার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
রুমেসাকে গ্রেপ্তার ও ভিসা বাতিল করায় বোস্টনের ফেডারেল আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন তাঁর আইনজীবী মাশা খানবাবাই।
পিটিশনে আইনজীবী বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে রুমেসা গত মঙ্গলবার তাঁর সমারভিলের বাসা থেকে বাইরে যান। সে সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।
রুমেসার সমর্থকেরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সোচ্চার হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদে বোস্টন থেকে এই প্রথম কোনো অভিবাসী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হলো।
ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে সংশ্লিষ্ট থাকায় ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশি বংশোদ্ভূত কিছু শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বা আটক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে রুমেসা গত মঙ্গলবার তাঁর সমারভিলের বাসা থেকে বাইরে যান। সে সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে বাক্স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বলে নিন্দা জানিয়েছেন অনেকে। তবে এই প্রশাসনের যুক্তি, ফিলিস্তিনপন্থী কিছু বিক্ষোভ ইহুদিবিরোধী ও তা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি লঙ্ঘন করে থাকতে পারে।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন এক্সে এক পোস্টে বলেন, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে যে ওজতুর্ক হামাসকে সমর্থন করে এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এটি একটি বিদেশি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন, যারা মার্কিনদের মেরে ফেলাকে সমর্থন করে।
তুর্কি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, ‘ভিসা একটি বিশেষ সুবিধা, কোনো অধিকার নয়।’
ওই সব কর্মকাণ্ড কী, সেটি নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন। টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রকাশনা টাফটস ডেইলিতে প্রকাশিত একটি মতামতের সহরচয়িতা ছিলেন রুমেসা।
ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে এবং ফিলিস্তিনি গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যে সাড়া দিয়েছিল, তার সমালোচনা করা হয় ওই নিবন্ধে। এ ঘটনার এক বছর পর রুমেসা গ্রেপ্তার হলেন।
আইনজীবী খানবাবাই বলেন, ‘দেশজুড়ে যে প্রবণতা আমরা লক্ষ করছি, তাতে তাঁর (রুমেসা) বাক্স্বাধীনতার অধিকারচর্চাই তাঁকে আটক করার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।’
নাগরিকদের স্বাধীনতা রোধ করতে চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার সাম্প্রতিকতম ঘটনা এটি।
আদালতের নির্দেশ
রুমেসাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে একটি নির্দেশ দিয়েছেন বোস্টনের মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জজ ইন্দিরা তালওয়ানি। গ্রেপ্তারের ঘটনায় পিটিশন দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ নির্দেশ দেন।
বিচারকের নির্দেশে অন্তত ৪৮ ঘণ্টার নোটিশ না দিয়ে রুমেসাকে ম্যাসাচুসেটসের বাইরে না পাঠাতে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টকে (আইসিই) বলা হয়।
ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে এবং ফিলিস্তিনি গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যে সাড়া দিয়েছিল, তার সমালোচনা করা হয় ওই নিবন্ধে। এ ঘটনার এক বছর পর রুমেসা গ্রেপ্তার হলেন।
ইতিমধ্যে খানবাবাই এক আবেদনে আদালতকে জানান, বিচারকের ওই নির্দেশ সত্ত্বেও তিনি (আইনজীবী) গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে রুমেসার অবস্থান সম্পর্কে জানতে ব্যর্থ হন। পরে মার্কিন সিনেটরদের অফিস থেকে জানতে পারেন, তাঁকে লুইজিয়ানায় স্থানান্তর করা হয়েছে। রুমেসার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের সুযোগ করে দিতে আইসিইকে নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
রুমেসাকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা। তাঁদের মধ্যে ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনও রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের স্বাধীনতা রোধ করতে চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার সাম্প্রতিকতম ঘটনা এটি।’
এদিকে রুমেসার প্রতি সমর্থন জানিয়ে গতকাল দিনের শেষে সমারভিলে একটি সমাবেশ আয়োজনের কথা ছিল।