সিগন্যাল কেলেঙ্কারি
জেরার মুখে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধানেরা, ট্রাম্প বললেন গোপনীয় কিছু ছিল না
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ সিগন্যালে সামরিক পরিকল্পনাসংক্রান্ত গ্রুপ চ্যাটে এক সাংবাদিককে যুক্ত করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিষয়টিকে ‘সিগন্যাল-গেট’ তথা সিগন্যাল কেলেঙ্কারি বলছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের শুনানিতে দেশটির তিন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা কড়া জেরার মুখে পড়েন। তবে বিষয়টি হালকাভাবে দেখছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ওই গ্রুপ চ্যাটে গোপনীয় কিছু ছিল না।
ওই গ্রুপে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ছাড়াও ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য ছিলেন। সেখানে দ্য আটলান্টিক পত্রিকার সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গকেও যুক্ত করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ ভুলবশত গোল্ডবার্গকে চ্যাট গ্রুপে যুক্ত করেন।
গ্রুপ চ্যাটে ইয়েমেনে হুতি গোষ্ঠীর ওপর বিমান হামলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ফলে বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই গোল্ডবার্গ জেনে গিয়েছিলেন, এই হামলা হতে চলেছে।
সিনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটির শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক জন র্যাটক্লিফ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল।
শুনানিতে বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট সদস্যদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন তিন গোয়েন্দা প্রধান। প্রায় দুই ঘণ্টা পর শুনানি মুলতবি করা হয়। এরপর শুরু হয় শুনানির রুদ্ধদ্বার অধিবেশন। সেখানে গোপনীয় ও স্পর্শকাতর তথ্য নিয়ে জেরা হওয়ার কথা।
সিগন্যাল গ্রুপের ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতারা। তবে বিষয়টি হালকাভাবে নিতে রাজি হননি ডেমোক্র্যাটরা। ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার বলেন, এ ঘটনায় বিশৃঙ্খলা, অসতর্কতা এবং অদক্ষ আচরণের বিষয়টি সামনে এসেছে।
ওই চ্যাটে গোপনীয় তথ্য থাকার বিষয়টি শুনানিতে তুলসী গ্যাবার্ড ও জন র্যাটক্লিফ উভয়ে অস্বীকার করেন। সিগন্যাল গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করার অনুমোদন আছে বলেও জোর দিয়ে বলেন সিআইএর পরিচালক। বিষয়টি বড় ধরনের ভুল ছিল কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না’।
ওই সিগন্যাল গ্রুপে আছেন কি না, তা প্রথমে নিশ্চিত করতে অস্বীকার করেন তুলসী গ্যাবার্ড। একপর্যায়ে তিনি ব্যাখ্যা দেন, অনিচ্ছাকৃত তথ্য প্রকাশ আর খারাপ উদ্দেশ্যে তথ্য ফাঁস করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
এ ঘটনায় ‘দ্বিদলীয় তদন্ত’ দাবি করেছেন সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের নেতা চাক শুমার। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ পরিকল্পনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এত এলোমেলো ও বিপজ্জনকভাবে সমন্বয় করাটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, আমাদের সেনা এবং প্রত্যেক আমেরিকানকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।’
অবশ্য বিষয়টিকে এতটা গুরুতর মনে করছেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এ নিয়ে প্রশ্ন নিতে চাচ্ছিলেন না তিনি। একপর্যায়ে কয়েকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করার পর ইতিমধ্যে অন্য কর্মকর্তাদের দেওয়া বক্তব্যই আবার তুলে ধরেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ওই চ্যাটে গোপনীয় কোনো তথ্য ছিল না। হুতিদের বিরুদ্ধে হামলাকে সফল বলেও দাবি করেন তিনি। তথ্য ফাঁসের ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নও দৃশ্যত এড়িয়ে যান। ট্রাম্প বলেন, সিগন্যাল অ্যাপ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তবে ভবিষ্যতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সম্ভবত আর এটি ব্যবহার করবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।