পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘উদীয়মান হুমকি’

পাকিস্তান দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজে শাহিন-৩ (সারফেস-টু-সারফেস) ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শনী। ইসলামাবাদ, পাকিস্তান, ২৩ মার্চ ২০১৯ছবি: রয়টার্স

হোয়াইট হাউসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তান দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা তৈরি করছে। যা শেষপর্যন্ত দেশটিকে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম করে তুলতে পারে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘উদীয়মান হুমকি’ হয়ে উঠছে।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা জন ফিনার গতকাল বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেছেন।

একসময় ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ২০২১ সালে পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদের মধ্যকার সম্পর্ক কতটা অবনতি হয়েছে, তা ইঙ্গিত দেয় জন ফিনারের এমন কথা।

জন ফিনারের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে যে পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উদ্দেশ্য বদল করেছে কি না।

কেননা, ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উদ্দেশ্য প্রতিবেশী ভারতকে মোকাবিলা করা।

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপর দেশ দুটি পরস্পরের বিরুদ্ধে একাধিকবার বড় যুদ্ধ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসে গতকাল কথা বলেন জন ফিনার। তিনি বলেন, পাকিস্তান ক্রমবর্ধমানভাবে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি উন্নয়নের কাজ করে চলছে। এর মধ্যে আছে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম, যা দেশটিকে উল্লেখযোগ্য বড় রকেট মোটর পরীক্ষায় সক্ষম করে তুলবে।

ক্যাপশন: পাকিস্তান দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে সালাম জানাচ্ছেন দেশটির এক সেনা। ইসলামাবাদ, পাকিস্তান, ২৩ মার্চ ২০২২
ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা বলেন, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা রাখবে পাকিস্তান। এই লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও থাকবে।

রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও চীনের নাম উল্লেখ করে বাইডেন প্রশাসনের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারে এমন সক্ষমতার ক্ষেপণাস্ত্রধারী পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত দেশের সংখ্যা বিশ্বে খুব কম। এবং তারা ওয়াশিংটনের প্রতিপক্ষ।

জন ফিনার বলেন, সুতরাং অকপটে বললে পাকিস্তানের পদক্ষেপগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি উদীয়মান হুমকি ছাড়া অন্য কিছু হিসেবে দেখা ওয়াশিংটনের পক্ষে কঠিন।

পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি সংস্থা ও একাধিক ফার্মের ওপর নতুন করে গত বুধবার নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আওতায় প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের রাষ্ট্র পরিচালিত একটি প্রতিরক্ষা সংস্থা (ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স-এনডিসি) এসেছে, যেটি এ-সংক্রান্ত কর্মসূচি দেখভাল করে থাকে।

ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপের এক দিন পরই হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপ-উপদেষ্টা জন ফিনার পাকিস্তানের বিকাশমান দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। বললেন, পাকিস্তান এমন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হতে পারে।

জন ফিনারের বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাস যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু পাকিস্তান দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।