হান্টারের কারাদণ্ড হলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কি ছেলেকে ক্ষমা করে দেবেন
মাদকাসক্তির তথ্য গোপন করা ও অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিজের কাছে রাখার অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তিনিই প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ছেলে, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
এখন হান্টারের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার অপেক্ষা। তিনি যেসব অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাতে তাঁর সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাঁর সাজার মেয়াদ অতটা লম্বা হবে না।
এই মামলা নিয়ে এখন পর্যন্ত কী জানা গেছে এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা–কল্পনা।
হান্টার কি কারাগারে যাবেন?
আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় বাইডেনপুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৮ সালে উইলমিংটনের আগ্নেয়াস্ত্রের একটি দোকান থেকে তিনি একটি রিভলবার কিনেছিলেন। আগ্নেয়াস্ত্রটি কেনার সময় তিনি ফেডারেল কাগজপত্রে দেওয়া তথ্যে নিজের মাদকাসক্তির কথা গোপন করেছিলেন। এ ঘটনায় হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনেন সরকারি কৌঁসুলিরা।
প্রথম অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সময় মিথ্যা তথ্য দেন হান্টার। দ্বিতীয় অভিযোগ, অস্ত্র বিক্রেতার নথিপত্রেও মিথ্যা তথ্য থাকার বন্দোবস্ত করেন তিনি। আর তৃতীয় অভিযোগ, হান্টার বাইডেন অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিজের কাছে রেখেছিলেন। হান্টার সব অভিযোগেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হান্টারকে যদি কারাদণ্ড দেওয়াও হয়, তবু তাঁর সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
হিউস্টনের সাউথ টেক্সাস কলেজ অব লর অধ্যাপক ড্রু স্টিভেনসন বলেছেন, হান্টার বাইডেনকে যদি পাঁচ বছরের কাছাকাছি মেয়াদের কারাদণ্ডও দেওয়া হয়, তবে তা হবে বাস্তবতাবিবর্জিত ও নজিরবিহীন ঘটনা। সাধারণত বিপজ্জনক ও এফবিআইয়ের নজরদারির তালিকায় নাম থাকা মানুষদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সাজা ঘোষণা করা হয়।
অধ্যাপক স্টিভেনসন বলেন, কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ। তাঁর ধারণা, ২০ মাসের মতো কারাদণ্ড হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আগে থেকে বলাটা কঠিন। তবে আমি মনে করি, এমনটা হওয়ার খুব সম্ভাবনা আছে।’
অধ্যাপক স্টিভেনসন এমনও মনে করেন, হান্টারকে কারাগারে না রেখে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
সাজার মেয়াদ কম রাখতে হান্টারের আইনজীবীরা যুক্তি দেখাতে পারেন যে তাঁদের মক্কেল মাদকাসক্তি থেকে সেরে উঠেছেন।
অবশ্য, মামলা তদারককারী বিচারপতি শুনানি চলাকালে হান্টার বাইডেনের আইনজীবীদের আপত্তিগুলো বারবারই খারিজ করে দিয়েছেন। বিচারপতি ম্যারিলিন নোরেইকাকে শুনানির সময় হান্টারের আইনজীবীদের প্রতি কঠোর থাকতে দেখা গেছে।
এ থেকে ধারণা করা যায়, হান্টারের যতটা কম সাজা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার চেয়ে তুলনামূলক কঠোর সাজা হতে পারে।
হান্টারের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা কবে?
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিচারপতি মেরিলিন নোরেইকা সাজা ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবার কারাদণ্ড ঘোষণামাত্রই যে হান্টারকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, এমনটা নয়। বরং, আত্মসমর্পণের জন্য তাঁকে একটি তারিখ দেওয়া হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি নিমা রহমানি বিবিসিকে বলেন, সাজা ঘোষণার পর আপিল আবেদন করতে হান্টারের আইনজীবী দল ৩০ দিন পর্যন্ত সময় পেতে পারে।
তবে তিনি মনে করেন, প্রেসিডেন্টের ছেলে হিসেবে হান্টার যেভাবে কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুরক্ষাবলয়ে থাকেন, তাতে তাঁকে কারাগারে পাঠানো কঠিন হবে।
জো বাইডেন কি ছেলেকে ক্ষমা করবেন
হান্টারকে দোষী সাব্যস্ত করার আগেই বাইডেন বলেছেন, তিনি তাঁর ক্ষমতাবলে ছেলেকে ক্ষমা করে দেবেন না।
গতকাল মঙ্গলবার হান্টারকে দোষী সাব্যস্ত করার পরও বাইডেনকে একই অবস্থান প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ওই দিন এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ মামলায় যে রায়ই আসুক না কেন, তিনি বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।
প্রমাণগুলো কতটা জোরালো
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, দেশটির নাগরিকদের অস্ত্র কেনার অধিকার আছে। কিন্তু অস্ত্র কেনার সময় একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় একটি আবেদনপত্র পূরণ করতে হয়। সেখানে বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি ক্রেতা মাদকাসক্ত কি না, সে তথ্য জানাতে হয়। আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় কৌঁসুলিরা অভিযোগ করেন, হান্টার যে দোকান থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটি কিনেছিলেন, সেখানকার কর্তৃপক্ষকে ধোঁকা দিতে তিনি জেনেশুনে ফরমটিতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন।
কৌঁসুলিরা হান্টারের মাদকাসক্তির প্রমাণ হিসেবে ওই সময় কারও কারও কাছে তাঁর পাঠানো কিছু খুদে বার্তাকে আদালতে উপস্থাপন করেন। বার্তাগুলো পাঠানোর সময় হান্টারের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রটি ছিল।
আগ্নেয়াস্ত্রটি কেনার পর ভাইয়ের স্ত্রী হ্যালি বাইডেনকে পাঠানো এক বার্তায় হান্টার লিখেছিলেন, তিনি মুকি নামের এক পরিবেশকের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে হ্যালি বলেন, হান্টার তখন কোকেন কিনছিলেন।
হান্টারের সাবেক স্ত্রী ক্যাথলিন বুহলে ও সাবেক প্রেমিকা জোয়ে কেস্তানও আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বাইডেনপুত্রের মাদকাসক্তির কথা বলেছেন।
২০২১ সালে প্রকাশিত হান্টার বাইডেনের আত্মজীবনী থেকেও কিছু বিষয় আদালতে উপস্থাপন করেন কৌঁসুলিরা। আত্মজীবনীতে হান্টার তাঁর মাদকাসক্ত জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে তিনি ১৫ মিনিট পরপরই মাদক সেবন করতেন। মাদক সংগ্রহ ও সেবন করাই তখন তাঁর কাজ ছিল।