বিজ্ঞানী থেকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট, কে এই ক্লদিয়া শেনবাউম
ক্লদিয়া শেনবাউম। মেক্সিকোর ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দেশটির ক্ষমতাসীন বামপন্থী দল থেকে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন শেনবাউম। গতকাল রোববার বিপুল ভোটে জয় পেয়ে দলকে নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় রাখছেন তিনি।
শেনবাউমের বয়স ৬১ বছর। রাজধানী মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র তিনি। শুরু থেকেই বামপন্থী রাজনীতি করেছেন। দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরকে গুরু মানেন তিনি। তবে পাকাপাকিভাবে ক্ষমতায় বসার পর ওব্রাদরের চেয়ে তিনি কতটা আলাদাভাবে নিজেকে মেলে ধরবেন, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন মেক্সিকোবাসী।
ক্লদিয়া শেনবাউম বিজ্ঞানের মানুষ। জ্বালানি প্রকৌশলে (এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং) তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি আছে। তিনি জলবায়ুবিজ্ঞানী। তাঁর ভাই পদার্থবিদ। ২০২৩ সালে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সঙ্গে এক আলাপচারিতায় শেনবাউম বলেন, ‘আমি বিজ্ঞানে বিশ্বাসী।’
পর্যবেক্ষকেরা বলেন, বিজ্ঞান নিয়ে শেনবাউমের পড়াশোনার ছায়া দেখা গেছে তাঁর রাজনৈতিক জীবনেও। তিনি মেক্সিকো সিটির মেয়র থাকাকালে করোনা মহামারির কবলে পড়েছিল দেশ। তখন শহরটির ৯০ লাখ মানুষকে করোনা থেকে সুরক্ষা দিতে তিনি যে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তা ছিল জাতীয় পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ওব্রাদরের নেওয়া পদক্ষেপের চেয়ে ভিন্ন।
সে সময় মেক্সিকোর কেন্দ্রীয় সরকার করোনা পরীক্ষার ওপর তেমন গুরুত্ব দেয়নি। মেক্সিকো সিটির চিত্র ছিল আলাদা। করোনা শনাক্তকরণে সেখানে বাড়ানো হয় পরীক্ষার আওতা। এমনকি মহামারি যখন চরমে পৌঁছেছিল, তখন প্রতিদিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখার সময়ও সীমিত করে দেন শেনবাউম।
করোনার সময় মেক্সিকোর অর্থনীতিতে আঘাত আসে, এমন কোনো পদক্ষেপ এড়িয়ে চলতে চাইতেন প্রেসিডেন্ট ওব্রাদর। মহামারির তোয়াক্কা না করে ভিড়ের মধ্যে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। একই সময় পুরোপুরি উল্টো চরিত্রের ছিলেন শেনবাউম। তিনি নিজে তো মাস্ক পরতেনই, সংক্রমণ এড়াতে অন্যদেরও দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলে উৎসাহ দিতেন।
আগামী ১ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসবেন ক্লদিয়া শেনবাউম। এর পরপরই তিনি যেসব বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মেক্সিকোয় চলমান সহিংসতা। নির্বাচনী এক প্রচারণায় শেনবাউম বলেছিলেন, দেশে অপরাধ দমনে প্রেসিডেন্ট ওব্রাদর যে নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলেছেন, তার পরিধি আরও বাড়াবেন তিনি।
অপরাধী চক্রগুলো দমনের বিষয়ে শেনবাউম বলেছিলেন, ‘পরিষ্কারভাবে বলি, এর অর্থ এই নয় যে সরকার কঠোর হাতে সব দমন করবে বা যুদ্ধ শুরু করবে বা কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবে। আমরা অপরাধের কারণ খুঁজে বের করার কৌশলে কাজ করব এবং অপরাধের পর দায়মুক্তি শূন্যের কোটায় আনার পথে এগিয়ে যাব।’
শেনবাউম বরাবরই প্রেসিডেন্ট ওব্রাদরের প্রশংসা করেছেন। আবার দেশের লাখ লাখ মানুষের দারিদ্র্যের জন্য নব্য উদারতাবাদী অর্থনীতিকে দোষারোপ করেছেন তিনি। প্রশংসা করেছেন মেক্সিকোর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান ‘পেমেক্স’–এর। একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
ওব্রাদরের সঙ্গে শেনবাউমের তফাত হলো, সরকারের অন্যান্য শাখা ও গণমাধ্যমের সঙ্গে নিজের লড়াইটা ওব্রাদর উপভোগ করেন বলেই মনে হয়েছে। অপর দিকে এমন লড়াইয়ে শেনবাউম কম জড়াবেন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। মেক্সিকোর আইবিরো আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইভোনি অ্যাকুনা মুরিলো বলেন, মনে হচ্ছে, তিনি ভিন্ন পথ ধরেই এগোবেন।
এদিকে ক্লদিয়া শেনবাউম শুধু মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্টই হতে যাচ্ছেন না, ইহুদি পরিবার থেকে আসা দেশটির প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানও হচ্ছেন তিনি। এর আগে মেক্সিকোর বেশির ভাগ প্রেসিডেন্টই ছিলেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টান।