মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
দোদুল্যমান রাজ্য পেনসিলভানিয়ার ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন ইহুদি ভোটাররা
গাজা যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইহুদি ভোটারদের মনোভাব বদলে দিয়েছে। অধিকাংশ মার্কিন ইহুদি ভোটার ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দিয়ে থাকলেও এবার তেমনটি হবে না বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, এ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিতে মুসলিমবিদ্বেষের মতো ইহুদিবিদ্বেষও বেড়েছে। অন্যদিকে নির্বাচিত হওয়ার পর কোন দলের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের প্রতি বেশি বন্ধুসুলভ থাকবেন, তা নিয়ে মার্কিন ইহুদি ভোটারদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশের সামান্য বেশি ইহুদি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর একটি পেনসিলভানিয়ার মোট বাসিন্দার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ইহুদি। অর্থাৎ দেশটিতে বসবাসকারী ইহুদিদের সবচেয়ে বেশি থাকেন এই রাজ্যে। রাজ্যটিতে ইহুদি ভোটারের সংখ্যা তিন লাখের বেশি। ১০০ বছর ধরে মার্কিন ইহুদি ভোটারদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ভোট দিয়ে আসছেন। কিন্তু গাজা যুদ্ধের কারণে এবার তেমনটি হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
টেক্সাসের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও ইসরায়েল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আশের লুবোটজকি তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলুকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে এবার মার্কিন ইহুদিদের হিসাব-নিকাশ কিছুটা বদলে গেছে। শুধু পররাষ্ট্রনীতির কারণে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন তা নয়। ইতিহাসে মার্কিন ইহুদিরা এবারই প্রথমবারের মতো একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভিন্ন চিন্তাভাবনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে (ইহুদিবিরোধী ও ফিলিস্তিনপন্থী) বিক্ষোভ বৃদ্ধির মতো অভ্যন্তরীণ বিষয় তাঁদের নতুন চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস ও শহরের অন্যত্র অনুষ্ঠিত এসব বিক্ষোভকে অনেকে ইহুদিবিদ্বেষমূলক ও জায়নবাদী মতাদর্শের বিরোধী বলে মনে করছেন।
এই অধ্যাপক বলেন, ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প—দুজনেই গত দুই মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার চেষ্টা করেছেন। এ সময় প্রচারে তাঁরা ইসরায়েল নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু ট্রাম্প ও তাঁর দলের কর্মীরা স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনবিরোধী। সেই তুলনায় কমলা ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল। অথবা বলা যায়, ইসরায়েল-গাজার বিতর্কিত বিষয় থেকে তিনি দূরে থেকেছেন। এ পরিস্থিতিতে উভয় প্রার্থী নিজেদের ইসরায়েলপন্থী হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করলেও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলার প্রতি এবার ইহুদি ভোটারদের সমর্থন কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া শহরের ইহুদি ভোটার স্টেফানি স্পিলম্যান আজীবন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীকে ভোট দিয়ে এসেছেন। এবারও তিনি দলটির প্রার্থী কমলাকে ভোট দেবেন। কিন্তু নিজ শহরের সার্বিক পরিস্থিতি আগের মতো নেই বলে মনে করেন তিনিও।
ফিলাডেলফিয়া শহরতলির এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমি একধরনের শূন্যতা অনুভব করছি। আমার মনে হয় না, তাঁরা (ডেমোক্র্যাট) আন্তরিকভাবে ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করছেন। তাঁরা যথেষ্ট আন্তরিকভাবে আমাদের জন্য কাজ করছেন না।’
১৫ অক্টোবর স্বাধীন অলাভজনক গোষ্ঠী ‘ফরোয়ার্ড’ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত ইহুদি ভোটারের ৬২ শতাংশ কমলাকে এবং ৩১ শতাংশ ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ২০২০ সালের সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী অঙ্গরাজ্যভেদে ইহুদি ভোটারদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। সেই তুলনায় এবার কমলা সম্ভব ইহুদি ভোটারদের কম ভোট পেতে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ফাইভ-থার্টি-এইটের সর্বশেষ তথ্যমতে, পেনসিলভানিয়ায় কমলা ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যটিতে কমলা ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেতে পারেন, ট্রাম্প পেতে পারেন ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোটারের সংখ্যা ১৯। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য এই ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যবধান গড়তে শেষ মুহূর্তে রাজ্যটিতে কোমর বেঁধে কাজ করছেন উভয় দলের কর্মীরা।