বোয়িংয়ে ১৬ বছরের মধ্যে প্রথম ধর্মঘট
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কয়েক হাজার কর্মী গত ১৬ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কর্মবিরতি শুরু করেছেন। বেতন নিয়ে সৃষ্ট বিবাদের জেরে গতকাল শুক্রবার (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) থেকে এ ধর্মঘট শুরু করেন তাঁরা।
সংকট কাটাতে একজন কেন্দ্রীয় মধ্যস্থতাকারীর অধীন আগামী সপ্তাহের শুরুতে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা আলোচনা শুরু হতে পারে বলে গতকাল সরকার জানিয়েছে। এর আগে বিমান খাতের এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের একটি প্রস্তাব প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাখ্যান করেন কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়। এর কয়েক ঘণ্টা আগে সিয়াটলে বোয়িংয়ের কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁদের অস্থায়ী চুক্তি ৯৪ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটে প্রত্যাখ্যান করেন। আর ধর্মঘটের পক্ষে ভোট দেন ৯৬ শতাংশ কর্মী।
ধর্মঘটের কারণে প্রতিষ্ঠানটির উড়োজাহাজ ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৭৭-এর যন্ত্রাংশ সংযোজনের দুটি প্রধান প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৩৩ হাজার কর্মীর এ কর্মবিরতির ফলে আগে থেকেই আর্থিক চাপে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা আরও বিলম্বিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ধর্মঘটের কারণে প্রতিষ্ঠানটির উড়োজাহাজ ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৭৭–এর যন্ত্রাংশ সংযোজনের দুটি প্রধান প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৩৩ হাজার কর্মীর এ কর্মবিরতির ফলে আগে থেকেই আর্থিক চাপে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা আরও বিলম্বিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বোয়িংয়ে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন মাইক করসেট্টি। বোয়িংয়ের এভারেট কারখানায় ধর্মঘট পালনকালে গতকাল এএফপিকে তিনি বলেন, ‘তারা (কর্তৃপক্ষ) আর্থিকভাবে আমাদের দুরবস্থার মধ্যে ফেলে রাখতে পারে না, সে বার্তাই প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে বোয়িংকে দিয়েছি আমরা।’
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কেলি অরটবার্গের নেতৃত্বাধীন বোয়িং কর্তৃপক্ষের আশা, গত চার বছরে কর্মীদের ২৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি এবং পুগেট সাউন্ড এলাকায় প্রতিষ্ঠানের কারখানায় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি (কর্মীদের দাবি–দাওয়া পূরণে) যথেষ্ট হবে।
তারা (কর্তৃপক্ষ) আর্থিকভাবে আমাদের দুরবস্থার মধ্যে ফেলে রাখতে পারে না—সেই বার্তাই প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে বোয়িংকে দিয়েছি আমরা।মাইক করসেট্টি, বোয়িংয়ের কর্মী
প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন সাধারণ কর্মীরা। তাঁরা বলেছেন, এ বক্তব্য তাঁদের গালে চড় মারার শামিল। কেননা, এক দশকের বেশি সময় ধরে তাঁদের যে বেতন দেওয়া হচ্ছে, তা উল্লেখ করার মতো নয়।
এদিকে, শুক্রবার দিন শেষে ফেডারেল মেডিয়েশন অ্যান্ড কনসিলিয়েশন সার্ভিস (এফএমসিএস) বলেছে, তারা দুপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং মধ্যস্থতার টেবিলে ফিরে আসার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
এক বিবৃতিতে এফএমসিএস বলেছে, বেতন নিয়ে চলা বিবাদ ও ধর্মঘট অবসানে আগামী সপ্তাহের শুরুতে সমঝোতা আলোচনায় বসবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।
বোয়িংয়ের কর্মীরা চান, তাঁদের বেতন ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হোক। সমালোচকেরা বলছেন, গত চার বছরে ২৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি অন্তঃসারশূন্য ঘটনা। কেননা, কর্তৃপক্ষের নতুন চুক্তিতে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বোনাস বাদ দেওয়া হয়েছে।
চুক্তিতে পেনশন ব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনার বিষয়টিও কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরির আরেকটি কারণ।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান কোম্পানি বোয়িংয়ের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। বিশ্বের অন্যতম বড় এই উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি গত কয়েক বছর ধরেই খারাপ, আর সেই ধারাবাহিকতা চলছে ২০২৪ সালেও। একের পর এক ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কোম্পানিটি।
সম্প্রতি বোয়িংয়ের একটি বিমান মাঝ আকাশ থেকে হঠাৎ সাঁই সাঁই করে নিচে নামতে শুরু করে। পাইলট বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে পাইলট নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেলেও বেশ কয়েকজন যাত্রী এ ঘটনায় আহত হন। বিমানের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়ে পাইলট কিছুক্ষণ পর এটি অবতরণ করাতে সক্ষম হন।
চলতি বছরের শুরু থেকেই একের পর এক খারাপ সংবাদ পাচ্ছে বোয়িং। বলা যায়, শনির দশার সূত্রপাত আলাস্কা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটের প্যানেল খুলে যাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ডোর প্লাগে যে নাট-বল্টু লাগানোর কথা ছিল, সেগুলো ঠিকঠাকমতো লাগানো ছিল না।
এ ঘটনায় কঠিন তদন্তের মুখোমুখি হয় বোয়িং; কমে যায় তাদের ক্রয়াদেশ ও সরবরাহ। নানা সংকটে চলতি বছর বোয়িংয়ের শেয়ারমূল্য এক-চতুর্থাংশের বেশি কমেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য কমেছে চার হাজার কোটি ডলার।