গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভের জের: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ

মিনুশে শফিকফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনুশে শফিক গতকাল বুধবার পদত্যাগ করেছেন।

গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে তুমুল বিক্ষোভের প্রায় চার মাস পর পদত্যাগ করলেন শফিক।

ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল—উভয়পন্থী লোকজন তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

শফিক গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তাদের কাছে একটি ই-মেইল পাঠান। এতে শফিক লিখেছেন, তিনি একটি অশান্ত সময় দেখেছেন। নানা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে যে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তা অতিক্রম করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এই সময়টা তাঁর পরিবারের ওপরও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে, যেমনটি প্রভাব ফেলেছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর।

শফিক মনে করেন, এ মুহূর্তে তাঁর চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তার সামনের চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রমে সর্বোত্তম সহায়তা করবে। তিনি তাঁর পদত্যাগের ঘোষণাটি এখন এ কারণেই দিয়েছেন, যাতে নতুন সেমিস্টার শুরুর আগে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্বে নিতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত অভিজাত আইভি লিগভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আর কয়েক সপ্তাহ পরই শরৎকালীন (অটাম) সেমিস্টার শুরু হবে। এই সেমিস্টার শুরু আগে শফিকের কাছ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা এল।

বিশ্ববিদ্যালয়টির আরভিং মেডিকেল সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাটরিনা আর্মস্ট্রং অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গত এপ্রিল-মে মাসে তুমুল শিক্ষার্থীবিক্ষোভ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীবিক্ষোভের অন্যতম কেন্দ্র ছিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কিছু অংশ দখল করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

বিক্ষোভকারীদের হটাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকেন শফিক। তাঁর এ পদক্ষেপের নিন্দা জানায় ফিলিস্তিনপন্থীরা। অন্যদিকে বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁর সমালোচনা করেন ইসরায়েলপন্থীরা।

গাজা নিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে শুনানি পর্যন্ত হয়। শুনানিতে শফিকসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের সমালোচনা করা হয়।

শফিকের সমালোচনা করেছিলেন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এলিস স্টেফানিক। তিনি শফিকের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, ইহুদি শিক্ষার্থীদের রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য তাঁর আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল।

শফিক মিসরীয় বংশোদ্ভূত অর্থনীতিবিদ। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য—উভয় দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। তিনি আগে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে তিনি ছিলেন। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম প্রেসিডেন্ট হন।