ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেই চিন্তায় মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ই–মেইল করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগেই তাঁদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে।
আগামী বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরলে অভিবাসীদের গণবিতাড়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ জন্য দেশটির সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
৫ নভেম্বরের ভোটে জয়ের পর ট্রাম্প নিজের সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে ‘উদ্বেগ’ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলোরাডো ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লো ইস্ট।
অধ্যাপক ক্লো ইস্ট বলেন, ‘এই মুহূর্তে সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীই উদ্বেগে রয়েছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের হায়ার ইডি ইমিগ্রেশন পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, চার লাখের বেশি অনথিভুক্ত শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় লেখাপড়া করছেন।
বিতাড়নের তালিকায় নাম ওঠা অনথিভুক্ত অভিবাসীদের রাখতে বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের হবু প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ট্রাম্পের হবু প্রশাসনে সীমান্ত দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছেন অভিজ্ঞ অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোম্যান। তিনি বলেন, ভয়ংকর অপরাধী এবং যাঁরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তাঁদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিতাড়িত করা হবে। যদিও তাঁর এই বক্তব্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আসা অনথিভুক্ত শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ কমাতে পারছে না।
অধ্যাপক ইস্ট বলেন, অভিবাসন ঘিরে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা অবিশ্বাস্য রকম উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী তাঁদের ভিসার মেয়াদ ও এখানে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।
এ মাসেই ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের জন্য একটি ভ্রমণ–সতর্কতা জারি করেছে। সেখানে তাঁদের আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার আগেই ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন শীতের ছুটি চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রশাসন যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, সেই পূর্বাভিজ্ঞতার আলোকে ঝুঁকি এড়াতে সতর্কতা হিসেবে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স অফিস এই ভ্রমণ উপদেশ জারি করছে।
২০১৭ সালে শপথ গ্রহণের পর প্রথম সপ্তাহেই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ সই করেছিলেন। সেই আদেশে কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশসহ উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। নিজের প্রথম মেয়াদে তিনি শিক্ষার্থীদের ভিসা সীমিত করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
এবার তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও ওয়েসলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও একই ধরনের ভ্রমণ–সতর্কতা জারি করেছে এবং শিক্ষার্থী ও কর্মীদের শপথের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছে।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে শুধু বিদেশি শিক্ষার্থীরাই উদ্বেগে আছেন, তা নয়। বরং অন্য দেশে জন্ম নিলেও শৈশবেই যুক্তরাষ্ট্র চলে আসা শিক্ষার্থীরাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এত দিন তাঁরা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডিএসিএ) নীতিতে সুরক্ষিত ছিলেন।
ট্রাম্প নিজের প্রথম মেয়াদে এই নীতি বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওবামার ডিএসিএ নীতিতে শৈশবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো পাঁচ লাখের বেশি অভিবাসী সুরক্ষিত আছেন।
অধ্যাপক ইস্ট বলেন, এশিয়ার নানা দেশ, বিশেষ করে চীনের শিক্ষার্থীরা ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কেমন থাকবে, তা নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ হয়ে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের আর্লহাম কলেজের শিক্ষার্থী জাপানের আওই মায়েদা। তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালের মে মাসে আমার স্নাতক হওয়ার কথা। কিন্তু এখন প্রশাসন কিছুটা বিপজ্জনক হতে চলেছে। তাই সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলবে, এমন আশা আমার কমে আসছে।’
মায়েদা বলেন, ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শুধু অবৈধ অভিবাসীদের এ দেশ থেকে বের করে দেবেন। কিন্তু তিনি আগেও নিজের কথা থেকে সরে গিয়ে আরও কঠোর হয়েছেন।
মায়েদা বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে এবং এতে আমাদের বিতাড়ন সহজ হয়ে যাবে।’