কারাগারে রাখার জন্য ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিককে এল সালভাদরে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণ করা ব্যক্তিদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এল সালভাদরের পুলিশ। এল সালভাদরের সেন্ট লুইস তালপা শহরের একটি বিমানবন্দরে, ১৬ মার্চ ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিকসহ মোট ২৬১ ব্যক্তিকে এল সালভাদরে প্রত্যর্পণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশটির এক বিচারক তাদের প্রত্যর্পণ না করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও তাদের প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। ভেনেজুয়েলা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন  ট্রাম্প প্রশাসনের এই কাজের সমালোচনা করেছে।

এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও উল্লিখিত ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণের কথা পৃথকভাবে নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় সময় রোববার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নায়েব বুকেলে লিখেছেন, প্রত্যর্পণ করা ব্যক্তিদের মধ্যে ভেনেজুয়েলার ট্রেন ডি আরাগুয়ার গ্যাংয়ের  ২৩৮ সদস্য রয়েছে। আন্তর্জাতিক গ্যাং গোষ্ঠী এমএস-১৩ এর সদস্য রয়েছে ২৩ জন।

এসব ব্যক্তিকে বিমানবন্দর থেকে এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়
ছবি: রয়টার্স

এসব ব্যক্তিকে এল সালভাদরের একটি উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন কারাগারে রাখা হবে। এ জন্য মধ্য আমেরিকার দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ পাবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেন ডি আরাগুয়ার সদস্যদের দ্রুত প্রত্যর্পণের জন্য গত শুক্রবার কয়েক শতকের পুরোনো ভিনদেশি শত্রু আইন বা এলিয়েন এনেমিস অ্যাক্ট ব্যবহারের নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি যুদ্ধকালীন আইন হিসেবে পরিচিত।

পরের দিন শনিবার ওয়াশিংটনের কেন্দ্রীয় সরকারের বিচারক জেমস বোসবার্গ ১৭৯৮ সালের ওই ভিনদেশি শত্রু আইনের ব্যবহার ১৪ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তাঁর যুক্ত ছিল, এই আইনে অন্য দেশের দ্বারা সংঘটিত এমন ‘শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডকে’ বোঝানো হয়েছে, যা ‘যুদ্ধের সমতুল্য’।

 এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারকের নির্দেশ নিয়ে কিছুটা ঠাট্টার সুরে বলেছেন, ‘উফ... অনেক দেরি হয়ে গেছে’।

 যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী অন্য দেশের অপরাধীদের এল সালভাদরের কারাগারে রাখার জন্য গত মাসে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তি হয়েছে। এটাকে ‘অভূতপূর্ব ও অসাধারণ অভিবাসন চুক্তি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

নায়েব বুকেলে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পণ করা ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে এক বছরের জন্য সন্ত্রাসবাদ বন্দিশিবিরে (সেকট) পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের আটকাদেশ বাড়ানো হতে পারে।

এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, ‘তাদের (প্রত্যর্পিত) পেছনে ব্যয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র খুব কম অর্থ দেবে, কিন্তু আমাদের জন্য বিপুল অর্থ দেবে।’

শনিবার বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেন ডি আরাগুয়ার ৩০০ অভিযুক্ত সদস্যকে এক বছর জেলে রাখতে এল সালভাদরকে ৬০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

নিজ দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগ করায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে ভেনেজুয়েলা। এক বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ‘ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের অন্যায়ভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করছে। [এর মাধ্যমে] দাসপ্রথা থেকে শুরু করে নাৎসি বন্দিশিবিরের ভয়াবহ স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে, যা মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার পর্ব হিসেবে পরিচিত।’

আরও পড়ুন