কানাডীয় সাহিত্য বা ক্যানলিট
কানাডীয় সাহিত্যকে আদর করে ক্যানলিট (CanLit) নামে অভিহিত করা হয়। তবে ক্যানলিট বলতে সামগ্রিকভাবে কানাডীয় সাহিত্য বোঝানো হয় না। গত শতাব্দীর ষাট দশকের শেষ ও সত্তরের দশকের শুরুতে কানাডীয় সাহিত্যে যে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটেছিল— যে বিস্ফোরণের নিনাদ গত পাঁচ দশক ধরে বিশ্ববাসী শুনে চলেছে, সেটিকে ক্যানলিট হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
১৯৬৭ সাল ছিল কানাডা কনফেডারেশনের শততম বার্ষিকী। এর আগের এক শ বছরে কানাডীয় সাহিত্য নিজের মতো করে স্বাতন্ত্র্য নিয়ে পুষ্ট হয়েছে সন্দেহ নেই। দুই বিশ্বযুদ্ধকালীন কানাডীয় সাহিত্য আধুনিকতার স্পর্শও পেয়েছিল প্রত্যাশা মতো। কিন্তু তারপরও কানাডীয় সাহিত্যে একটি বিরাট শূন্যতা ছিল। অধিকাংশ কানাডীয় মনে করতেন, তাঁদের আসলে নিজস্ব কোনো সাহিত্য নেই। আর যদি তেমন কিছু থাকেও তবে সেটি বিশেষ উৎসাহব্যঞ্জক ছিল না তাদের বিবেচনায়। শূন্যতার কারণ তত দিনেও কানাডার স্কুল-কলেজে পাঠ্য হিসেবে কানাডীয় লেখকদের গল্প, কবিতা, উপন্যাস অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তত দিনেও কানাডীয় প্রকাশনা সংস্থা প্রয়োজনীয়ভাবে দৃঢ়তা অর্জন না করতে পারায় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই প্রকাশের প্রশ্ন উঠলেই আমেরিকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কথাই সবার মনে আসত। আর এসবের ফলে সাহিত্য ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেল পুরস্কারের মতো একটি শীর্ষ পুরস্কারের প্রবর্তন হলেও ঘাটতি রয়ে গিয়েছিল ব্যাপক। সেই ঘাটতি থেকে কানাডা মুক্তি পায় আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে। যদিও তার আগে আরও দশ বছর ধরে এক ধরনের প্রস্তুতি চলছিল। অথবা বলা যায়, প্রায় দুই দশক ধরে একটি ভূমি তৈরি হচ্ছিল।
কানাডীয় জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির একটি সাংস্কৃতিক চর্চা ও পরিবেশ তৈরির ব্যাপার কানাডাতে ১৯৫১ সালে নীতিগতভাবে স্বীকৃতি পায়। ওই বছরে পাস হয় মেসি রিপোর্ট। রিপোর্টটির মূল নাম ছিল ‘রয়্যাল কমিশন অব ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইন দ্য আর্টস, লেটারস অ্যান্ড সায়েন্সেস’। কানাডায় জন্ম নেওয়া প্রথম গভর্নর জেনারেল ভিনসেন্ট মেসির (১৮৮৭-১৯৬৭) নেতৃত্বে মেসি কমিশন ১ জুন তাঁদের পেশকৃত রিপোর্টে অনেকগুলো প্রস্তাব করেছিলেন। তার একটি ছিল কানাডা কাউন্সিল ফর দ্য আর্টস প্রতিষ্ঠা করা। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৫৭ সালে শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে কানাডা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য কনফেডারেশনের শতবর্ষ পূর্তিকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করা হয় দশক-ব্যাপী বিভিন্ন প্রকল্পের, যেগুলোতে কানাডীয় জাতীয় সাহিত্য সৃষ্টির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
এই যে ১৯৫০-এর দশক -সেই সময়ের কানাডীয় সাহিত্যের সামগ্রিক চিত্রটি কেমন ছিল? ক্যানলিটের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র মার্গারেট অ্যাটউডের (জন্ম: ১৯৩৯) ‘অরিয়েনটেশন: হু ডু ইউ থিংক ইউ আর?’ শিরোনামে বক্তৃতায় একটি চিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। সে চিত্রের সারসংক্ষেপটি এমন যে সেকালে গণমাধ্যম ও সাহিত্য নিয়ে যুক্ত ছিলেন প্রধানত কবিরাই। সে সময় কানাডায় ঔপন্যাসিকের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। যাঁরা ছিলেন তাঁরাও পরস্পরকে চিনতেন না। কানাডাতে তাঁরা লেখক হিসেবে কাজ করতে পারেন এমনটিও তাঁরা মনে করতেন না। (নেগোশিয়েটিং উইথ দ্য ডেড: অ্যা রাইটার অন রাইটিং, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০২, পৃ: ২৩)। মার্গারেট কবিদের যে কথা বললেন, সেই কবিদের ব্যাপারে তাঁর ভাবনার সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৮২ সালে লেখা তাঁর প্রবন্ধ ‘জে ম্যাকফারসন: পোয়েমস টোয়াইস টোল্ড’-এ। ‘সেকেন্ড ওয়ার্ডস’ শিরোনামের প্রবন্ধগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত ওই প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন- আমরা যখন ছোটো ছিলাম, তখন কানাডায় কবিতার সমালোচনা বিশেষ বিকশিত হয়নি। সে সময় কবিরা তাদের বন্ধু বা শত্রু কবিদের কবিতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা লিখতেন। যাঁরা এই কাজটি করতেন তাঁরা সকলেই পরস্পরকে বন্ধু বা শত্রু হিসেবে চিনতেন (আনানসি, টরন্টো, ১৯৮২, পৃ: ৪০৭)। কানাডীয়দের সাহিত্য পাঠের সে চিত্রটি ছিল রীতিমতো অবিশ্বাস্য রকমের। কানাডীয় কবিতায় আধুনিকতার অগ্রদূত কবি আর্ল বার্নি (১৯০৪-১৯৯৫) যেমনটি দাবি করেছেন যে, সে সময় কানাডীয়দের বাড়িতে যে তিনটি বই থাকত সেগুলো হলো-বাইবেল, শেক্সপিয়ার রচনাবলী এবং ফিটজেরাল্ডের অনুবাদে ‘দ্য রুবাইয়াত-ই ওমর-খইয়াম’ (নেগোশিয়েটিং উইথ দ্য ডেড, পৃ: ৬)।
সবার জানা আছে ১৯৫৯ সালে কানাডা কাউন্সিল গভর্নর জেনারেল সাহিত্য পুরস্কার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। প্রথমত: তেইশ বছর ধরে যে পুরস্কারটি শুধু সম্মানের একটি বিষয় ছিল, সেটির সঙ্গে যুক্ত হয় লেখকের জন্য এক হাজার ডলার অর্থমূল্য। ছয় বছরের মাথায় অর্থমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয় আড়াইগুণ। ইংরেজি ছিল এত দিন পর্যন্ত পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যের একমাত্র মাধ্যম। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হলো ফরাসি। একই সঙ্গে গ্রন্থ প্রকাশের জন্য প্রস্তাবকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকেও সহযোগিতা দেওয়া শুরু হলো। সামগ্রিক এই উদ্যোগ কানাডার শিল্প-সাহিত্য-প্রকাশনা জগতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করতে সক্ষম হয়।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক নিক মাউন্ট (জন্ম: ১৯৫২) তাঁর ‘অ্যারাইভাল’ গ্রন্থে জানিয়েছেন, প্রথম বছরে শুরুতে একজন লেখককে এক হাজার ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছিল, যদিও কাউন্সিল মোট ৪১ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছিল অন্যান্য শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রকাশনা ক্ষেত্রে। যদিও পরের বছরেই চিত্রটি পাল্টে যায়। পরের বছরে লেখকদের দেওয়া হয় ৪৪ হাজার ডলার অনুদান, আর সামগ্রিক অনুদানের পরিমাণ ছিল এক কোটি ১৪ লাখ ডলার (আনানসি, টরন্টো, ২০১৭, পৃ: ৪২)। জানা যায়, ১৯৬৭-৬৮ সালে বই লেখা, প্রকাশনা, সাহিত্যপাঠ, সাহিত্য-উৎসব ইত্যাদি খাতে কানাডা কাউন্সিল মোট চার লাখ একষট্টি হাজার ডলার অনুদান দিয়েছিল। এবং তত দিনে কানাডায় আলোড়ন তুলে চলেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ ও মেধাবী কবি এবং লেখক। ষাটের দশক থেকে কানাডার সব মেধাবী লেখকই বই লিখেছেন সরকারি অনুদান নিয়ে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ মার্গারেট অ্যাটউডের নাম সর্বাগ্রে উচ্চারণযোগ্য বাঙালি পাঠকের কাছে। ১৯৬৯ সালে মার্গারেট ছয় হাজার ডলার অনুদান লাভ করেন এবং সে সময়কালের ফসল তাঁর যে তিনটি গ্রন্থ সেগুলোই লেখক হিসেবে মার্গারেটের আজকের যে উচ্চতা সেখানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল। সে সময়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে মার্গারেট বলেছেন, আমরা আরও ভালো বই দেখেছি, ভবিষ্যতেও দেখব, কিন্তু যেটি দেখব না সেটি হচ্ছে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বিশাল সংখ্যক ভালো বইয়ের প্রকাশ। এটা ছিল একটা ফ্লাডগেট খুলে দেওয়ার মতো।
‘ক্যানলিট’ শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় আল বার্নির রচনায়। ১৯৬২ সালে তিনি একটি কবিতা লিখলেন ‘Can.Lit.’ নামে। গবেষকেরা বলছেন, এরপর শব্দটি পাওয়া যায় ১৯৬৯ সালে টরন্টোর ‘গ্লোব অ্যান্ড মেইল’ পত্রিকায় উইলিয়াম ফ্রেন্সের লেখাতে। বাক্যটি ছিল এমন: ‘All of a sudden, we’ve got CanLit coming out of our ears’’। একটি পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কানাডায় জনসংখ্যা বেড়েছিল ১৭ শতাংশ, অথচ কানাডীয় লেখকের, কানাডীয় প্রকাশনালয় থেকে প্রকাশিত সাহিত্য গ্রন্থের প্রকাশ বেড়েছিল ২৫০ শতাংশ। এবং অবশ্যই উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ওই দশকে আমেরিকায় প্রকাশিত গ্রন্থের পাঁচগুণ বেশি ছিল সেটি। ইতিমধ্যে ১৯৬৮ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হলো পিয়েরে ট্রুডো (১৯১৯-২০০০)। ব্রিটিশ প্রভাব থেকে মুক্ত করে কানাডাকে একটি স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত জাতিতে রূপান্তরিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তিনি। সাহিত্যক্ষেত্রেও ওই দেশনেতার উদ্যোগের ফল প্রতিফলিত হতে শুরু হলো।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ষাটের দশকের আগে কানাডায় সাহিত্য পত্রিকাও ছিল হাতে গোনা। কিন্তু দশক ঘুরতেই সংখ্যাটা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছিল যে মাইকেল ওনদাতজী (জন্ম: ১৯৪৩) একবার সঠিক সংখ্যাটি নিরূপণ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সে সময়টি এমন ছিল যে একটির পর একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনোটি প্রথম সংখ্যাতেও থেমে গেছে বলে জানা যায়। কিন্তু একটি থেমেছে তো আরও পাঁচটি প্রকাশিত হয়েছে। আর এভাবেই কানাডায় সাহিত্য-চর্চায় এসেছে জোয়ার।
স্কুল-কলেজে নিজ দেশের সাহিত্য পাঠ না হওয়া নিয়ে একসময় কী যে দুরবস্থা চলেছে কানাডায়! অকালপ্রয়াত কবি প্যাট লোথার (১৯৩৫-১৯৭৫) ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তারিখে ‘পারফরমেন্স’ নামের পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে কানাডার হাইস্কুলে পড়া ছাত্রছাত্রীদের শতকরা দশ ভাগেরও কম কানাডীয় সাহিত্য পড়ে। তিনি খেদের সঙ্গে আরও বলেছিলেন যে, সম্ভবত কানাডা হলো পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে কিনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজ দেশের কবিতা, কথাসাহিত্য বা নাটক পড়ানোর ব্যাপারে এত নির্বিকার।
১৭৪৪ সালে পিয়ের ফ্রাঙ্কোয়েস জেভিয়ার লিখেছিলেন সেই স্পেন দেশীয় নাবিকের কথা, যিনি চিৎকার করে বলে উঠেছিলেন, ‘Aca Nada’(Here’s Nothing) এবং সেখান থেকে আজকের কানাডা। সেই কানাডার কনফেডারেশনের শতবর্ষের মাথায় তৈরি ‘ক্যানলিট’-এর সার্ধশতের মাথায় আজ আমরা দাঁড়িয়ে। শতবর্ষের ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় মার্গারেট লিখেছিলেন ‘সারভাইভাল’ Ñ ক্যানলিটের বিস্ফোরণ নিয়ে প্রথম কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থ। সার্ধশত বর্ষে আমাদের হাতে এল নিক মাউন্টের ‘অ্যারাইভাল’। গত শতাব্দীর ষাটের শেষ দশকে কানাডার সাহিত্যাঙ্গনে যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল তারই ফসল কানাডায় আজ প্রতি ছয় শ মানুষের মধ্যে একজন লেখক। উল্লেখ করা যেতে পারে, সংখ্যাটি ১৯৬১ সালে ছিল প্রতি ১৪০০ জনে একজন। ১৯৩১ সালে প্রতি ৩ হাজার এক শ জনে মাত্র একজন লেখক ছিলেন।
কানাডীয়দের আত্মপরিচয়ের সংকট কাটতে প্রকৃতপক্ষে কনফেডারেশনের শতবর্ষ পার করতে হয়েছে। সেটি যে ১৯৬০ এর দশকের শেষ পর্যন্তও কাটেনি তার প্রমাণ ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত বিশিষ্ট কবি মিরিয়াম ওয়াডিংটনের (১৯১৭-২০০৪) রচিত কবিতা ‘কানাডিয়ানস’। তিনি লিখলেন: ... We look / like a geography but/ just scratch us/ and we bleed/ history, are full/ of modest misery/ are sensitive/ to double-talk double-take/ (and double-cross)/ in a country/ too wide/ to be single in./ Are we real or/ did someone invent/ us …?
বোঝা যায়, যে কানাডা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকেও চীন থেকে আগত অভিবাসীদের ‘দাস’ হিসেবে কেনাবেচা করেছে, যে কানাডা ১৯১৪ সালে কোমাগাতা মারু জাহাজের ওপর গুলিবর্ষণের হুমকি দিয়েছে দেশকে ‘একমাত্র সাদাদের দেশ’ করে রাখার জন্য, সেই কানাডা আসলে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্তও নিজেদের পরিচয়ের সংকট কাটাতে পারেনি (লক্ষ্যণীয়: রয় ম্যাকগ্রেগর রচিত ‘কানাডিয়ানস: অ্যা পোর্ট্রটে অব অ্যা কান্ট্রি অ্যান্ড ইঁস পিপল, ভাইকিং কানাডা, টরন্টো, ২০০৭, পৃষ্ঠা: ২৩৩-২৩৫)। গত পঞ্চাশ বছর ছিল সেই সংকট অতিক্রমনের কাল। আজ কানাডা মানবিকতার যে উচ্চতায় আসীন, বহু সংস্কৃতির যে বোধে পুষ্ট হয়ে বিশ্বজুড়ে একটি অনন্য উদাহরণ, সেটির ছাপ কানাডীয় সাহিত্যেও মূর্ত।
আর তাই, ১৯৭২ সালে লেখা ‘সারভাইভাল’ বইতে মার্গারেট যে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, সে প্রশ্নগুলোই ‘ক্যানলিট’-এর মূল চালিকা। সে প্রশ্নগুলোর উত্তর থেকেই ক্যানলিটের বিকাশ। সেই যে প্রশ্ন ‘কী আছে এই দেশে যা নিয়ে পড়তে হবে?’ বা ‘কী আছে এই দেশে যা নিয়ে লেখা যায়?’ (এম অ্যান্ড এস সংস্করণ, টরন্টো, ২০০৪, পৃ: ২১)। সত্যি কথা হলো ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত সবাই যেন এমনটিই ভাবছিলেন। দশক শেষ হওয়ার আগেই তাই আমরা পেয়ে যাই ‘দ্য প্রাইড’-এর মতো কবিতা। ১৯৬৮ সালে ‘ব্ল্যাক নাইট উইনডো’ কাব্যগ্রন্থের ওই কবিতায় কবি জন নিউলাভ (১৯৩৮-২০০৩) দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করলেন - ‘We stand alone,/ we are no longer lonely/ but have roots,/ and the rooted words/ recur in the mind, mirror, so that/ we dwell on nothing else, in nothing else,/ touched, repeating them,/ at home freely/ at last, in amazement.’লেখক-কবিদের এই চেতনা গত পঞ্চাশ বছর ধরে কানাডীয় সাহিত্যকে পুষ্ট করে চলেছে, আর তার ফসল হিসেবেই কানাডীয় সাহিত্য বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীর গ্রাহ্য একটি সম্ভার যার দিকে বিশ্বপাঠক বিস্ময়ের সঙ্গে তাকিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের উপন্যাস নিয়ে লেখক সুব্রত কুমার দাসের দ্বিভাষী ওয়েবসাইট বাংলাদেশি নভেলস-এর ঠিকানা http://bdnovels.org/