রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বুধবার ব্রিকস সম্মেলনে একটি নতুন বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা তৈরির কথা বলেছেন। রাশিয়ার কাজান শহরে গত মঙ্গলবার শুরু হয়েছেন তিন দিনব্যাপী ব্রিকস সম্মেলন। বিশ্বনেতাদের এ সম্মেলন থেকে পুতিন পশ্চিমাদের মস্কোকে বিচ্ছিন্ন করার যে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, তা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন বলে আশা করছেন।
পুতিন ইউক্রেনে ২০২২ সালে সেনা পাঠানোর আদেশ দেওয়ার পর থেকে পশ্চিমাদের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে রাশিয়ায় এটাই সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে চীন, ভারত, তুরস্ক, ইরানসহ বিশ্বের প্রায় ২০ জন নেতা কাজান শহরের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এবারের সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে ব্রিকসের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত নিরসন।
মস্কোর পক্ষ থেকে ব্রিকসকে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট-৭–এর বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্মেলনের উদ্বোধনীতে পুতিন বলেছেন, ‘একটি বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এটি একটি গতিশীল এবং অপরিবর্তনীয় প্রক্রিয়া।’ রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ব্রিকস সংস্থা আন্তর্জাতিক বিষয়ে তার কর্তৃত্ব জোরদার করছে। তীব্র আঞ্চলিক সংঘাতসহ বৈশ্বিক এজেন্ডায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে তিনি ব্রিকস সদস্যদের কাজ করতে আহ্বান জানান।
গতকাল ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। দুই বছরের মধ্যে এটাই তাঁর প্রথম রাশিয়া সফর।
পুতিনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বৈঠকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও কৌশলগত অংশীদারত্বের জন্য সি চিন পিং ও নরেন্দ্র মোদির মতো নেতাদের প্রশংসা করেন।
বর্তমান বিশৃঙ্খল বিশ্বে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের গভীর বন্ধুত্বের প্রশংসা করেন সি। পুতিন বলেন, তিনি বেইজিং ও চীনের মধ্যে সম্পর্ককে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি হিসেবে দেখেছেন।
সম্মেলন ঘিরে কাজানের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে রাশিয়া। এ সম্মেলনে আসা অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে দেশটি।
উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও ভারত মিলে ১৫ বছর আগে ব্রিকস জোট গঠন করে। পরের বছর যোগ দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে যুক্ত করে এ জোটের সম্প্রসারণ ঘটানো হয়।
পশ্চিমাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝাতে পুতিন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে গতকাল পৃথক বৈঠক করেন। এ ছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোয়ানের সঙ্গেও তাঁর বৈঠক করার কথা রয়েছে।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য তুরস্ককে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্ক আরও বেশি হৃদ্যতা দেখাতে চায়।
আজ বৃহস্পতিবার পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করবেন গুতেরেস। ক্রেমলিন বলছে, তাঁদের আলোচনায় ইউক্রেন সংঘাত গুরুত্ব পাবে। কিয়েভ জাতিসংঘের প্রধান গুতেরেসের সফরের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকতে চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি মঙ্গলবার বৈঠকে দ্রুত ইউক্রেন সংঘাত শেষ করার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এ সংঘাত নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো বিরোধ সমাধান করা উচিত। আমরা দ্রুত শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি।’
চীনের প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ইউক্রেন ছাড়াও রাশিয়ার অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়ার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন পুতিন।
গতকাল সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ব্রিকস। রাশিয়ায় এ সপ্তাহের সম্মেলনে আরও ন্যায়সংগত বিশ্ব গড়ার সুযোগ সামনে এসেছে।