বিশ্বের শীর্ষ ১০ জনবহুল শহর কোনগুলো, ঢাকার অবস্থান কত
বিশ্বের জনসংখ্যা ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর ৮০০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করে। মানুষের সংখ্যা বাড়ার এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা কতটা সময় ধরে অব্যাহত থাকবে, তা নিয়ে মতভেদ আছে। কোনো কোনো গবেষণা বলছে, চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে জনসংখ্যা বাড়ার প্রবণতা কমতে শুরু করবে। তবে তার আগেই বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৮৮০ কোটি। জাতিসংঘের অনুমিত হিসাব বলছে, ২০৮০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা ১ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। এর ফলে শহরগুলো ব্যাপকভাবে জনবহুল হয়ে পড়ছে। কিন্তু অধিকাংশ শহরে মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। গত জানুয়ারিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০ জনবহুল শহরের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি সায়েন্স ফোকাস সাময়িকী। এতে শহরগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
এই ১০ শহরের মধ্যে ৭টিই এশিয়ার। ভারত, চীন ও জাপানে রয়েছে দুটি করে শহর। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও আছে এই তালিকায়।
উল্টোক্রমে শহরগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক—
১০. ওসাকা
জাপানের ওসাকা শহরের বাসিন্দা ১ কোটি ৯২ লাখ। জাপানের ঐতিহাসিক এই শহর দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও শিল্পনগরী। জাপানের অনেক বড় বড় কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এ শহরে অবস্থিত। খাবারদাবার, আধুনিক স্থাপত্যের কারণে ওসাকা পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। শহরটির মেট্রোব্যবস্থা বছরে ৯০ কোটির বেশি মানুষ পরিবহন করে।
৯. বেইজিং
চীনের রাজধানী বেইজিং বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি। চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটির বাসিন্দা ১ কোটি ৯৪ লাখ। বিপুলসংখ্যক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বেইজিংয়ে অবস্থিত। গত ৫০ বছরে বেইজিংয়ের জনসংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। প্রতি কিলোমিটারে বাস করে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ জন। বেইজিংয়ে জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি এখানকার অনেক বাসিন্দার ধনসম্পদ-প্রাচুর্য বেড়েছে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধনকুবের বসবাস করেন বেইজিংয়ে। তবে শিল্পদূষণের পাশাপাশি ঘন ঘন ধূলিঝড় ও গাড়ির কার্বন নিঃসরণের কারণে বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহরের তকমাও জুটেছে বেইজিংয়ের। স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় শহরটির বাসিন্দাদের প্রায় সময় ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়। বেইজিংয়ের পাতালরেল–ব্যবস্থা চমৎকার। বাইসাইকেল জনপ্রিয় করার জন্য ঋণের নানা প্রকল্পও রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়েই চলছে।
৮. মুম্বাই
সাতটি দ্বীপ নিয়ে ভারতের মুম্বাই শহর গঠিত। ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্প বলিউড এ শহরে অবস্থিত। শহরটির প্রাণবন্ত সংস্কৃতির খ্যাতি দুনিয়াজোড়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মুম্বাই ভারতের বাণিজ্যিক ও আর্থিক রাজধানী। দেশটির প্রায় সব বড় কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এখানে রয়েছে। এ কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশটির প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে প্রতিদিন দলে দলে মানুষ ঢুকছে এই শহরে। ২ কোটি ১ লাখ মানুষের এই শহরের সামগ্রিক আবাসনসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিম্নমানের। শহরটির জন্য বিষয়টি মাথাব্যথার একটি বড় কারণ। শহরটির কিছু সড়ক বিশ্বের ব্যস্ততম হিসেবে পরিচিত। এ শহরে যানজট লেগেই থাকে।
৭. ঢাকা
ঢাকা সম্পর্কে বিবিসি সায়েন্স ফোকাস সাময়িকীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী শহরটি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। চারদিকে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত এ শহরের বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ২ লাখ। শহরে বছরজুড়ে নানা ধরনের উৎসব ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান লেগে থাকে। শহরটির লালবাগ দুর্গ, নিমতলী দেউড়ি, বড় কাটরা, ছোট কাটরা, আহসান মঞ্জিল পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকা শহরে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরটির যানজটের পরিস্থিতি ভয়াবহ। পরিবহনব্যবস্থা নিম্নমানের।
৬. কায়রো
প্রাচীন নানা স্থাপত্যকর্ম ও পিরামিডের জন্য মিসরের রাজধানী কায়রো বিশ্ববিখ্যাত। উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে যুক্ত দেশটির এই শহরের বাসিন্দাসংখ্যা ২ কোটি ৪ লাখ। পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ রাজধানী কায়রোতে বাস করে। কায়রোর সড়কে বেশ যানজট থাকে। তাই শহরটিতে সম্প্রতি দুটি মনোরেল–ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কায়রোয় মাঝেমধ্যে ধূলিঝড় দেখা দেয়।
৫. মেক্সিকো সিটি
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ২৪০ মিটার উঁচুতে। এটি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীনতম শহর। নানা ধরনের জাদুঘর, খাবারের দোকান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হওয়ায় শহরটিতে বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটে। মেক্সিকো সিটির বর্তমান জনসংখ্যা ২ কোটি ১৬ লাখ। অথচ ১৯০০ সালে শহরটির জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৫ লাখ। ১৯৭০-এর দশকে শহরটির জনসংখ্যা ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। শহরটির নানা জায়গায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য বস্তি।
৪. সাও পাওলো
একদিকে চরম দারিদ্র্য, অন্যদিকে ধনসম্পদের চাকচিক্য। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরটি বিশেষভাবে পরিচিত। এই বাণিজ্যকেন্দ্রটিতে যেমন আকাশচুম্বী ভবন আছে, তেমনি আছে বস্তিও। শহরটির জনসংখ্যা ২ কোটি ১৮ লাখ। শহরটির বড় সমস্যা পানি সরবরাহব্যবস্থা। একসময় অপরাধ চক্রের জন্য কুখ্যাতি ছিল শহরটির। তবে সম্প্রতি তা কমতে শুরু করেছে।
৩. সাংহাই
চীনের ইয়াংজি নদীর দক্ষিণ মোহনায় অবস্থিত সাংহাই একসময় ছিল ছোট একটি গ্রাম। তখন এটি জেলেদের গ্রাম হিসেবেই পরিচিত ছিল। পরে চীনের বৃহত্তম শহরে পরিণত হয় সাংহাই। শুধু তা-ই নয়, এটি বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর একটি। এই শহরে ২ কোটি ৬৩ লাখ মানুষের বসবাস। শহরটির সড়কের ধারে গড়ে ওঠা সারি সারি দোকানে দৈনিক ১০ লাখ মানুষ কেনাকাটা করে। প্রথাগত ও আধুনিক—উভয় ধরনের দোকানই এখানে রয়েছে।
২. নয়াদিল্লি
ভারতের রাজধানী শহর নয়াদিল্লি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে নয়াদিল্লি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। নয়াদিল্লিতে ২ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ বাস করে। দুই হাজার বছরের বেশি সময় আগে শহরটির গোড়াপত্তন হয়েছিল। শহরটির অবকাঠামো পুরোনো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শহরটির জন্য অনেক নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নয়াদিল্লির নানান সমস্যা আছে। এর মধ্যে গাড়ি ও শিল্পদূষণ বড় সমস্যা। আছে যানজটের সমস্যাও। শহরের প্রায় ৫০ শতাংশ বাসিন্দা নিম্নমানের বাসস্থানে বসবাস করে বলে ধারণা করা হয়।
১. টোকিও
জাপানের রাজধানী টোকিও। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর। টোকিওতে ৩ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ বাস করে। টোকিওর জনসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের চেয়ে চার গুণ বেশি। শহরটির আয়তন ১৩ হাজার ৪৫২ বর্গকিলোমিটার। বৃহত্তর টোকিও মহানগর এলাকার প্রতি কিলোমিটারে গড়ে ২ হাজার ৬৪২ জন মানুষ বাস করে। শহরটিতে বাসাবাড়ির তীব্র সংকট রয়েছে। এ কারণে বাসাভাড়া অনেক বেশি। এর ফলে শহরটির তরুণদের মধ্যে ৯ বর্গমিটারের ছোট ছোট বাসা জনপ্রিয় হচ্ছে। টোকিও শহরের সড়কগুলোতে প্রায় সময় ভিড় থাকে। গণপরিবহন জনাকীর্ণ ও ব্যয়বহুল। তবে গণপরিবহনগুলো ঠিক সময়ে আসা-যাওয়া করে।