তেলের দাম বেঁধে দেওয়ায় শিগগিরই ধাক্কা খাবেন পুতিন: যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়া থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেঁধে দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। সে অনুযায়ী সমুদ্রপথে আমদানি করা রাশিয়ার তেল প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের বেশি দামে কেনা যাবে না। আগামী সোমবার থেকে এই দাম কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এ পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার আয় কমে যাবে। ফলে অচিরেই বড় ধাক্কা খাবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মস্কোকে চাপে ফেলার চেষ্টায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা। সেই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার রাশিয়ার জ্বালানি তেলের দাম বেঁধে দেওয়া হলো। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে এই প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপান নিয়ে গঠিত জোট জি-৭ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
রুশ তেলের দাম বেঁধে দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, এরই মধ্যে রাশিয়ার অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। দেশটির জাতীয় বাজেটও আকারে ছোট হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে তেলের দাম বেঁধে দেওয়ায় পুতিনের আয়ের সবচেয়ে বড় খাতটি ধাক্কা খাবে। আর জি-৭, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়ার এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তেল বিক্রির আয় দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছেন পুতিন। সেই পথ এবার অনেকটা বন্ধ হবে। তবে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তেলের মূল্য পশ্চিমারা বেঁধে দিলেও সংকট কাটাতে রাশিয়া তার তেলের জন্য ক্রেতাদের সন্ধান চালিয়ে যাবে।
এদিকে ৫ ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন একটি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে যাচ্ছে। সেদিন থেকে এই জোটের কোনো দেশ সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে না। একই সময়ে নতুন করে দাম বেঁধে দেওয়ার অর্থ হলো, ইউরোপের বাইরে অন্য দেশগুলোতেও রাশিয়ার তেল রপ্তানিকে সমস্যার মুখে ফেলা।
এখন থেকে পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে একমত দেশগুলোকে সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেল কেনার ক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার বা এর কম দাম পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে যেসব দেশ এই প্রস্তাব মানবে না, সেসব দেশে রুশ তেল সরবরাহকারী জাহাজগুলোকে বিমা সুবিধা দেবে না ইউক্রেনের মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো।
তবে রাশিয়া কিন্তু আগে থেকেই ভারত ও চীনের কাছে কম দামে তেল বিক্রি করছে। বর্তমানে এই দুই দেশ তাদের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। তাই দাম বেঁধে দেওয়া রাশিয়ার ওপর চরম কোনো আঘাত হানবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক লিওনিড স্লুতস্কির ভাষ্য, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পশ্চিমারা উল্টো নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তাঝুঁকির মুখে ফেলছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের অর্ধেকের বেশি কিনত ইউরোপের দেশগুলো। সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল যথাক্রমে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ড। তবে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুশ তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দেশগুলো। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রুশ তেলের আমদানি বন্ধ করেছে। আর যুক্তরাজ্য এই বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে বলে জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনের চাওয়া ছিল, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৩০ থেকে ৪০ ডলারে বেঁধে দেবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রস্তাব অনেকটাই মেনে নিয়েছে। পুতিনের চাওয়া ছিল, ৬০ ডলারেই তেল কিনবে পশ্চিমারা। সেই ৬০ ডলারে তেল কেনার ব্যাপারে একমত পশ্চিমারা।
৫ ডিসেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগেই একটা ঐকমত্যে পৌঁছানো ইউরোপের জন্য বেশ জরুরি ছিল। কারণ, যেসব জাহাজ রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিবহন করবে, তাদের ক্ষেত্রে বিমা প্রযোজ্য হবে না। এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে চীন, ভারতসহ আর যেসব দেশ রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, তারা বিপাকে পড়বে। কারণ, জাহাজের অধিকাংশ বিমাকারী ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক।