বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ গাড়ি কোনগুলো, এতে কী আছে

গাড়িপ্রেমীদের অনেকেই চান, তাঁর গাড়িটি কার্যক্ষমতা ও নকশার দিক থেকে অতুলনীয় হোক। তাঁরা এমন গাড়ি চান, যাতে অত্যাধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। অত্যাধুনিক বিনোদনপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। গাড়ি হবে আরামদায়ক। আর গাড়িপ্রেমীদের এমন চাহিদার কথা মাথায় রেখে নানা বিলাসবহুল গাড়ি তৈরি করছে কোম্পানিগুলো।

২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ গাড়ির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস ইন্ডিয়া। গাড়িশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সূত্রগুলোর কাছ থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তালিকাটি করা হয়েছে। তালিকায় আছে রোলস রয়েস লা রোজ নোরে ড্রপটেইল, রোলস রয়েস বোট টেইলসহ বিভিন্ন গাড়ির নাম।

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ গাড়ি-সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

রোলস রয়েস লা রোজ নোরে ড্রপটেইল

রোলস রয়েস লা রোজ নোরে ড্রপটেইল মডেলের গাড়ি
ছবি: রোলস রয়েসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

রোলস রয়েস লা রোজ নোরে ড্রপটেইল বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি। দাম তিন কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর দাম প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। রোলস রয়েসের আগের মডেলের গাড়িগুলো চার আসনের। কিন্তু লা রোজ নোরে ড্রপটেইলের আসনসংখ্যা ২। এর ছাদটি সরিয়ে ফেলা যায়।

রোলস রয়েস লা রোজ নোরে ড্রপটেইল গাড়ির বাইরের অংশটি কার্বন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি। গাড়িটি ৫ দশমিক ৩ মিটার লম্বা, ২ মিটার চওড়া। ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে তাকালে গাড়িটির রং ভিন্ন ভিন্ন দেখা যায়। ১৫০টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গাড়িটিতে এমন উদ্ভাবনী রং ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। গাড়িটির নকশা করা হয়েছে ফ্রান্সের ব্ল্যাক বাকারা গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে মিল রেখে।

লা রোজ নোরে ড্রপটেইলের আসনগুলো মসৃণ চামড়া দিয়ে তৈরি। ব্ল্যাক বাকারা গোলাপের পাপড়ির রঙের সঙ্গে মিল রেখে আসনের রং গাঢ় লাল রাখা হয়েছে। অত্যন্ত বিলাসবহুল এ গাড়ি তৈরি করতে সময় লেগেছে ২ বছর ৯ মাস।

রোলস রয়েস বোট টেইল

রোলস রয়েস বোট টেইল গাড়ি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রোলস রয়েসের বোট টেইল গাড়িও বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ির তালিকায় আছে। দুটি রঙের মিশেলে গাড়ির বাইরের অংশটি তৈরি করা হয়েছে। ভেতরের ‘বিল্ট ইন সান আমব্রেলা’ ও ‘শ্যাম্পেইন ফ্রিজ’ গাড়িটিকে অনন্য করে তুলেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় গাড়িটির দাম ৩৩১ কোটি টাকার বেশি।

বুগাত্তি লা ভইতুর নোরে

বুগাত্তি লা ভইতুর নোরে গাড়ি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ফরাসি ভাষায় ‘লা ভইতুর নোরে’ শব্দটির অর্থ কালো গাড়ি। গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি বুগাত্তির তৈরি এ গাড়িতে আছে শক্তিশালী কোয়াড টার্বো ৮ লিটার ডব্লিউ ১৬ ইঞ্জিন। পরিশীলতা, কমনীয়তা, নির্বিঘ্ন গতি, নান্দনিকতা, বিলাসিতা ও প্রযুক্তির মিশেলে তৈরি লা ভইতুর নোরে মডেলের গাড়ি যেন একটি ‘মাস্টারপিস’ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই গাড়ির দাম ২২১ কোটি টাকার বেশি।

পাগানি জোন্দা এইচপি বারকেত্তা

পাগানি জোন্দা এইচপি বারকেত্তা গাড়ি
ছবি: পাগানির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

বিশ্বের দুর্লভ কিছু গাড়ি তৈরির কারণে ইতালীয় গাড়ি কোম্পানি পাগানির খ্যাতি আছে। ১৯৯২ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা হোরাসিও পাগানি। হাইপার কারের বাজারে পাগানি কোম্পানির শক্তপোক্ত অবস্থান আছে। তা সত্ত্বেও কোম্পানিটি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের উৎপাদিত গাড়ির সংখ্যা সীমিত রাখে। আর এ বিষয়টিই ইতালির অপর দুই গাড়ি কোম্পানি ল্যাম্বরগিনি ও ফেরারি থেকে পাগানিকে আলাদা করেছে।

জোন্দা এইচপি বারকেত্তা নামের দামি গাড়ি তৈরি করেছে পাগানি। বিশেষ মডেলের ব্যতিক্রমী এই গাড়ি তৈরি করা হবে মাত্র তিনটি। এর মধ্যে একটি গাড়ি হোরাসিওর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। অনন্য ও নিখুঁত গাড়ি তৈরির ব্যাপারে কোম্পানির দেওয়া প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই কেবল এ মডেলের গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ গাড়ির এ মডেলটি দুর্লভ থাকছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই গাড়ির দাম দাঁড়ায় ২০০ কোটি টাকার বেশি।

এসপি অটোমোটিভ কেওস

এসপি অটোমোটিভ কেওস গাড়ি
ছবি: স্পাইরোস পানোপুলসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

গাড়ির নকশার জন্য খ্যাত গ্রিক কোম্পানি স্পাইরোস পানোপুলস দুটি উচ্চ কার্যক্ষমতার গাড়ি তৈরি করেছে। দ্য এসপি অটোমোটিভ কেওস আর্থ ভাসন নামের এ গাড়িতে আছে একটি কোয়াড টার্বো ভি-১০ ইঞ্জিন। এ গাড়ি ৭ দশমিক ৫ সেকেন্ডের কম সময়ে কোয়ার্টার মাইল দূরত্ব পার হতে পারে। ২০২১ সালের ১ নভেম্বর এ গাড়ি উন্মোচন করা হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ গাড়ির দাম ১৭০ কোটি টাকার বেশি।

রোলস রয়েস সোয়েপটেইল

দামি গাড়ির তালিকায় থাকা রোলস রয়েস সোয়েপটেইল মডেলের গাড়ি ২০১৭ সালের মে মাসে উন্মোচন করা হয়। গত শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে রোলস রয়েসের কোচবিল্ট গাড়িগুলোর আদলে এ গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ গাড়ির দাম ১৫৪ কোটি টাকার বেশি।

বুগাত্তি সেন্তোদিয়েচি

গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বুগাত্তি তার ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট বুগাত্তি সেন্তোদিয়েচি মডেলের গাড়িটি বাজারে আনে। এটি স্পোর্টস কার। ইতালীয় ভাষার শব্দ সেন্তোদিয়েচির অর্থ ১১০। আইকনিক ইবি ১১০ মডেলের গাড়ির ধাঁচে তৈরি সেন্তোদিয়েচি মডেলের গাড়িটি যে শুধু ঐতিহাসিক অনুপ্রেরণার ধারা বহন করছে, তা নয়। বরং অতুলনীয় কার্যক্ষমতা ও অত্যাধুনিক নকশা এটিকে আধুনিক যুগেও মানানসই করে তুলেছে। তবে এ গাড়ি তৈরি হয়েছে মাত্র ১০টি। বাংলাদেশি মুদ্রায় গাড়িটির দাম ১০৪ কোটি টাকার বেশি।

মার্সিডিজ মেবাক এক্সেলেরো

জার্মানির গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি মার্সিডিজের তৈরি এ গাড়িটি স্পোর্টস কার। এটি ২০০৫ সালে উন্মোচন করা হয়। এ গাড়িতে টুইন টার্বো ভি১২ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। গাড়িটির ওজন ২ হাজার ৬৬০ কেজি। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫১ কিলোমিটার গতি পর্যন্ত যেতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় গাড়িটির দাম ৯৪ কোটি টাকার বেশি।

পাগানি হুয়ারা কোদালুঙ্গা

বিশ্বের দামি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে গ্রাহকদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর তা করতে গিয়েই হুয়ারা কোদালুঙ্গা মডেলের গাড়িটি তৈরি করেছে পাগানি। কারণ, গ্রাহকেরা চাইছিল, ১৯৬০-এর দশকে দেখা পাওয়া রেস কারগুলোর নকশার আদলে গাড়ি তৈরি করুক পাগানি। হুয়ারা কোদালুঙ্গা মডেলের স্পোর্টস কারটি ২০২২ সালের জুনে উন্মোচন করা হয়। তবে পাগানি এ গাড়ি তৈরি করেছে মাত্র পাঁচটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় গাড়ির দাম ৮৭ কোটি টাকার বেশি।

১০

বুগাত্তি দিভো

গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বুগাত্তির তৈরি করা এ গাড়িও বিশ্বের দামি গাড়ির তালিকায় আছে। ২০১৮ সালের ২৪ আগস্ট বুগাত্তি দিভো গাড়িটি বাজারে আসে। এটি একটি স্পোর্টস কার। গাড়িটিতে এমন সব ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যা এটির দাম বেশি হওয়াকে যৌক্তিক করে তুলেছে। এ গাড়ির ওজন তুলনামূলক কম। এর চাকাগুলো হালকা। এতে একটি কার্বন ফাইবার ইন্টারকুলার আছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় গাড়িটির দাম ৬৫ কোটি টাকা।