ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে চীন-জাপান-যুক্তরাজ্যসহ দেশে দেশে ক্ষোভ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দিয়েছেন, তার বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছে চীন, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশ। ট্রাম্পের এ ঘোষণায় দেশগুলোর দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাদের ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
ট্রাম্পের নতুন করে এ শুল্ক আরোপ করাকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বিকেল চারটায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত দুইটা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের এ একতরফা শুল্ক পদক্ষেপ খুবই দুঃখজনক এবং এটি জাপানের ওপর প্রয়োগ না করার জন্য আমি জোরাল আহ্বান জানাই (ওয়াশিংটনকে)।
চীন
বেইজিং বলেছে, তাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে শুল্ক আরোপকে ‘জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান’ করছে তারা। সেই সঙ্গে নিজের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এবং এটি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
জার্মানি
দ্য জার্মান অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ভিডিএ) বলেছে, এই শুল্ক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সংখ্যাই শুধু বাড়াবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখন নিজেদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছে উল্লেখ করে ভিডিএ আরও বলেছে, এ জোট সমঝোতায় আগ্রহের ইঙ্গিতও দিয়ে যাচ্ছে।
জার্মান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠানটি ইইউকে ‘মাথা ঠান্ডা’ রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেছে, ‘উত্তেজনা শুধু ক্ষতিই বাড়াবে।’
জাপানের মুখ্য কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োসিমাসা হায়াসি সাংবাদিকদের বলেন, এ শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিমালা ও দুই পক্ষের মধ্যকার বাণিজ্য চুক্তির লঙ্ঘন হয়ে থাকতে পারে।
জাপান
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যে ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের শিকার জাপান। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়োসি মুতো ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।
ইয়োসি মুতো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ একতরফা শুল্ক পদক্ষেপ খুবই দুঃখজনক এবং এটি জাপানের ওপর প্রয়োগ না করার জন্য আমি জোরালো আহ্বান জানাই (ওয়াশিংটনকে)।’
জাপানের মুখ্য কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োসিমাসা হায়াসি সাংবাদিকদের বলেন, এ শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিমালা ও দুই পক্ষের মধ্যকার বাণিজ্য চুক্তির লঙ্ঘন হয়ে থাকতে পারে।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা অর্থনৈতিক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে যুক্তরাজ্য শান্ত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে বলে জানান ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথান রেনল্ডস। তিনি বলেন, এমন চুক্তি যুক্তরাজ্যের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ শুল্ক কমাতে সহায়তা করতে পারে।
যদিও ব্রিটিশমন্ত্রী আরও বলেন, ‘(পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে) কোনো কিছুই ভাবনার বাইরে নেই। আমাদের কাছে অনেক কিছুই রয়েছে এবং তা কাজে লাগাতে ইতস্তত করব না।’
(পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে) কোনো কিছুই ভাবনার বাইরে নেই। আমাদের কাছে অনেক কিছুই রয়েছে এবং তা কাজে লাগাতে ইতস্তত করব না।
কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, এ শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে বদলে দেবে।
মার্ক কার্নি আরও বলেন, ‘আমরা পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে এ শুল্ক মোকাবিলা করতে যাচ্ছি। আমরা আমাদের কর্মীদের সুরক্ষা দিতে চলেছি।’
ব্রাজিল
ব্রাজিলের আইনসভা ‘ইকোনমিক রেসিপ্রোসিটি ল’ নামে একটি আইনের অনুমোদন দিয়েছে। এতে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির রপ্তানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পাল্টা ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী বিভাগকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সিনেটের সবুজসংকেত পেয়ে সর্বসম্মতিক্রমে ওই আইন অনুমোদন করেছে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ।
দক্ষিণ আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার পর স্টিলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ। ২০২৪ সালে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ লাখ টন স্টিল পাঠিয়েছে।
সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের ওপর ৩১ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার–সাটার বলেছেন, সামনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সরকার শিগগিরই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সুইস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্বার্থ অগ্রাধিকারমূলক বিষয়। আন্তর্জাতিক আইন ও অবাধ বাণিজ্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোও মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন ধারণা করছে, তার আমদানি করা পণ্যের ওপর ঢালাওভাবে শুল্ক আরোপ করে নিজেদের উৎপাদন, সম্পদ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে পারবে। আমার মতে, এটা বড় ভুল হতে পারে।’
থাইল্যান্ড
থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ট্রাম্পের ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে ব্যাপারে ‘শক্ত পরিকল্পনা’ তাঁর সরকারের রয়েছে। পেতংতার্নের আশা, সমঝোতার মাধ্যমে এ হার কমানো সম্ভব হবে। নতুন শুল্ক আরোপের প্রভাব কমাতে তাঁর সরকার পদক্ষেপ নেবে বলেও জানান তিনি।
ডেনমার্ক
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপ বৈশ্বিক সমৃদ্ধিকে হুমকিতে ফেলেছে।
রাসমুসেন আরও বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য আমাদের অধিকতর ভালো একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছে। চলতি প্রজন্মে বিশ্ব আরও সম্পদশালী হয়েছে, চরম দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে এবং আমরা সবাই আরও দীর্ঘজীবী হয়েছি।’
‘অনাকাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যযুদ্ধে ইউরোপের সবকিছু বিপন্ন হতে দেখে (আমি) দুঃখিত’, বলেন রাসমুসেন।
কলম্বিয়া
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেছেন, উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে ট্রাম্প ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন।
পেত্রো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন ধারণা করছে, তার আমদানি করা পণ্যের ওপর ঢালাওভাবে শুল্ক আরোপ করে নিজেদের উৎপাদন, সম্পদ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে পারবে। আমার মতে, এটা বড় ভুল হতে পারে।’