ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ভেতর থেকে সহায়তা পেয়েছেন হামলাকারীরা: লুলা দা সিলভা
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলার জন্য সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনোরোকে দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। গত রোববার দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলা করেন বিক্ষোভকারীরা। এই হামলায় প্রাসাদের কর্মীরা জড়িত থাকতে পারেন বলে মনে করছেন লুলা। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা বলেন, প্রাসাদের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বলসোনারোর সমর্থকেরা হামলাকারীদের প্রাসাদের ভেতরে যেতে সহায়তা করেছেন। যেকোনো বিক্ষোভ এড়াতে প্রাসাদে কর্মরত সব কর্মীদের পরিচয় খতিয়ে দেখা হবে।
গত রোববার বিকেলে জইর বলসোনারোর হাজারো ডানপন্থী সমর্থক ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় কংগ্রেস ভবন, প্রেসিডেন্ট ভবন ও সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালান। দেশটির জাতীয় রঙের পোশাক পরে এবং গায়ে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে তাঁরা এ হামলায় অংশ নেন। অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের ক্যাপিটলে চালানো তাণ্ডবের আদলে এই হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে দেড় হাজার মানুষকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
হামলার বিষয়ে রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন লুলা দা সিলভা। তিনি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ খুলে রাখা হয়েছিল যাতে বিক্ষোভাকারীরা সেখানে ঢুকতে পারেন। এটা মনে হওয়ার কারণ হলো—প্রাসাদের সামনের কোনো দরজা ভাঙা আমার চোখে পড়েনি। এর মানে হলো কেউ তাঁদের প্রবেশ করতে সহযোগিতা করেছে।’
বামপন্থী এই নেতা বলেন, সামরিক পুলিশের অনেক সদস্য হামলাকারীদের সহায়তা করেছেন। এছাড়া প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ভেতরে থাকা সামরিক বাহিনীর অনেকে এই অবৈধ কাজে ইন্ধন যুগিয়েছে।
এদিকে হামলার দিন এর পেছনে স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে দায়ী করেছিলেন লুলা দা সিলভা। তাঁর দাবি, বলসোনারোর সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যান্ডারসন তোরেস দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতে ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার আবারও লুলা একই দাবি করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বলসোনারোর সমর্থক ও সেনা কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ভরে গেছে। আমরা এখন এই অবস্থা পাল্টাতে চাই। যেনো এসব পদে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে পারি। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ।’
কাউকে বলসোনারোর কট্টর সমর্থক হিসেবে সন্দেহ করা হলে তাঁকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে থাকতে দেওয়া হবে না বলেও জানান লুলা। তিনি বলেন, ‘আমাকে গুলি করতে পারে এমন কাউকে কীভাবে আমি অফিসে রাখব।’
গত অক্টোবরের নির্বাচনে বামপন্থী লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হন বলসোনারো। তবে তাঁর সমর্থকেরা এই পরাজয় মেনে নেননি। এর রেশে গত রোববার বিকেলে জইর বলসোনারোর হাজারো ডানপন্থী সমর্থক ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় কংগ্রেস ভবন, প্রেসিডেন্ট ভবন ও সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালান।
বলসোনারো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় রয়েছেন। প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগেই বলসোনারো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় যাওয়ার জন্য ব্রাজিল ছাড়েন। গত সোমবার পেটে ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তবে হামলার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।