আদালতের নির্দেশে লুলার নির্বাচনী বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণের আগে প্রচারণা চলছে। ৩০ অক্টোবরের দ্বিতীয় দফার ভোটে লড়ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও কট্টরপন্থী প্রার্থী জইর বলসোনারো এবং বামপন্থী প্রার্থী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। লুলার প্রচারণায় ব্যবহৃত একটি বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছেন ব্রাজিলের একটি আদালত। ওই বিজ্ঞাপনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বলসোনারোকে ‘নরখাদক’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
দ্বিতীয় দফার ভোটের তিন সপ্তাহের কম সময় আগে বিজ্ঞাপনটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বিরোধটি আদালতে গড়ায়। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার ব্রাজিলের সুপিরিয়র ইলেকটোরাল ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে বিচারক পাওলো দে তারসো সেনসেভেরিনো বিজ্ঞাপনটির প্রচার নিষিদ্ধ করেন।
২০১৬ সালে বলসোনারো ব্রাজিলের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওই সময় নিউইয়র্ক টাইমস–এ তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। ওই সাক্ষাৎকারে বলসোনারো বলেছিলেন, ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলের রোরাইমা রাজ্যের ইয়ানোমামি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ‘নরখাদকমূলক আচারে’ অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
বলসোনারোর পুরোনো ওই মন্তব্য লুলা তাঁর নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করেছেন। এটা নিয়েই বিরোধ ছড়িয়েছে দুই পক্ষে। বিজ্ঞাপনটিতে বলসোনারোর ওই মন্তব্য দেখানোর পর একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘ব্রাজিলবাসী তাঁর (বলসোনারো) মুখ থেকে বিভিন্ন উদ্ভট কথা শুনেছে। এখানে এমনই একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। এটা আগে বলা কথার চেয়েও ভয়ংকর। তিনি বলেছেন, তিনি আদিবাসীদের আয়োজনে অংশ নিয়ে মানুষের মাংস খেয়েছেন। এই কথা তিনি নিজের মুখেই বলেছেন। ব্রাজিল আর বলসোনারোকে সহ্য করতে পারে না।’
শুনানি শেষে বিচারক সেনসেভেরিনো বলেন, ‘ওই সাক্ষাৎকারে বলসোনারো যা বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা পুরোপুরি প্রচার করা হয়নি। তাই তাঁর (বলসোনারো) বক্তব্য অনেকটাই বদলে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ওই বক্তব্যের ওপর নির্মিত বিজ্ঞাপন প্রচারের যৌক্তিকতা নেই।’
বিজ্ঞাপনটির বিরোধিতা করেছেন ইয়ানোমামি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতা জুনিয়র হেকুরারি। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের সম্প্রদায়ে মানুষের মাংস খাওয়ার প্রথা প্রচলিত নেই। তাই এ ধরনের কোনো আয়োজনের প্রশ্নই আসে না।’
তবে বামপন্থী প্রার্থী লুলা গতকাল ওই বিজ্ঞাপন নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিজ্ঞাপনে যে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা আমাদের কথা নয়। এ কথা বলসোনারো নিজের মুখে একজন আমেরিকান সাংবাদিককে বলেছিলেন, সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। আমরা শুধু সেই কথা জনগণের সামনে তুলে ধরেছি।’
গত ২ অক্টোবর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফার ভোটে লুলা পান ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। আর বলসোনারো পান ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ব্রাজিলের নির্বাচনী ব্যবস্থায় বলা আছে, জয় পেতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে। কিন্তু প্রার্থীরা যদি ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হন, তবে দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ম মেনে প্রথম দফায় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত লুলা ও বলসোনারো ৩০ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় লড়বেন।