ইউক্রেন নিয়ে মন্তব্যের জেরে পর্তুগালে বিক্ষোভের মুখে লুলা
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সম্প্রতি করা এক মন্তব্যের জেরে বিদেশ সফরে গিয়ে জনরোষের মুখে পড়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। লুলার পাঁচ দিনের পর্তুগাল সফর শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার। এদিন তিনি লিসবন পৌঁছানোর সময় সেখানে ইউক্রেনের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেন ইউক্রেনের নাগরিকেরা। এ সময় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইউক্রেনীয়দের যুদ্ধবিরোধী পতাকা নাড়তে দেখা যায়। যুদ্ধের নৃশংসতার ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ডও ছিল তাঁদের হাতে।
সম্প্রতি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন, ইউক্রেনে যে যুদ্ধ চলছে, এর পেছনে মস্কো ও কিয়েভ দুই পক্ষেরই দায় আছে। একই সঙ্গে লুলা বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও (ইইউ) দায় আছে। কারণ, ইউক্রেনকে অবিরতভাবে অস্ত্র সরবরাহ করে তারা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার মদদ জোগাচ্ছে। লুলার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর উচিত ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা। লুলার এই মন্তব্যে ইউক্রেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়াকে একই চোখে দেখায় লুলার সমালোচনা করেছে ইউক্রেন। তবে মন্তব্যের জেরে সমালোচনা শুরুর পর লুলার স্বর কিছুটা নিচু হয়েছে। তিনি ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করার জন্য রাশিয়ার নিন্দা করেছেন। একই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে পুনরায় মধ্যস্থতার প্রস্তাবও দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।
লুলার পর্তুগাল সফর ঘিরে লিসবনে ইউক্রেনের দূতাবাসের সামনে হওয়া বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ইয়ানা কোলোমিতিস। ইউক্রেনীয় নাগরিক ইয়ানা এখন পর্তুগালে আছেন একজন শরণার্থী হিসেবে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার মন্তব্যকে ভয়ানক আখ্যায়িত করেছেন তিনি। ইয়ানা বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। আমি জানি না ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট কী কারণে পুতিনকে সমর্থন করছেন।’ পুতিনকে একজন হত্যাকারী মনে করেন তিনি।
শুক্রবার লিসবনে ইউক্রেনের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করা ইউক্রেনীয়দের হাতে, ‘রাশিয়া একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ এবং ‘আমাদের সন্তান হত্যা বন্ধ করতে হবে’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। যুদ্ধবিরোধী স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। পর্তুগালে বসবাসরত ইউক্রেনীয়দের সংগঠন পর্তুগাল ইউক্রেনিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পাভলো লুলা এই অবস্থান নেওয়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘আজীবন একজন মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে এখন কর্তৃত্ববাদী একটি রাষ্ট্রের পক্ষ নিয়েছেন।’
প্রেসিডেন্ট লুলার নেতৃত্বাধীন ব্রাজিল সরকার ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্রাজিলের দুজন সরকারি কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে বলেন, আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া পর্তুগাল সফরের সময় প্রেসিডেন্ট লুলা পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা এড়িয়ে যাবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।