মস্তিষ্কে ৯ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচার চলাকালে রোগী বাজালেন স্যাক্সোফোন। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গণমাধ্যমের বরাতে গত শনিবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
খবরে বলা হয়, ওই রোগী একজন সংগীতশিল্পী। জিজেড নামে পরিচিত তিনি। সম্প্রতি রোমের পাইদেইয়া ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে ৩৫ বছর বয়সী এ শিল্পীর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারকালে ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র লাভ স্টোরির থিম সং ও ইতালির জাতীয় সংগীত বাজান তিনি।
চিকিৎসকেরা জানান, জিজেড স্বাভাবিক জীবনের দিকে দ্রুত এগোচ্ছেন। সফল অস্ত্রোপচার শেষে তাঁকে ইতিমধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জটিল অস্ত্রোপচারের সময়ও চিকিৎসকেরা ওই রোগীকে জাগিয়ে রেখেছিলেন। কারণ, তাঁরা চাননি তাঁর স্বাভাবিক স্নায়ুবিক কার্যক্রম ব্যাহত হোক।
জিজেডের অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন নিউরোসার্জন ক্রিশ্চিয়ান ব্রোগনা। প্রত্যেক ব্যক্তির মতো প্রতিটি মস্তিষ্কও স্বতন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোগীকে জাগিয়ে রেখে অস্ত্রোপচার করলে মস্তিষ্কের মানচিত্র বোঝা সম্ভব হয়। এ ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে স্নায়ুবিক নেটওয়ার্কের দিকে নির্ভুলভাবে লক্ষ রাখতে হয়। কারণ এর সঙ্গে ব্যক্তির নড়াচড়া, কথা বলা, মনে রাখা ও গণনা করার ক্ষমতার মতো বিষয়গুলো সম্পৃক্ত থাকে।
এদিকে এক বিবৃতিতে জিজেড বলেছেন, অস্ত্রোপচারের সময় তিনি ভয় পাওয়ার পরিবর্তে প্রশান্তি অনুভব করেছেন।
জিজেডের অস্ত্রোপচারে ডা. ব্রোগনারের সঙ্গে ১০ সদস্যের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন।
মূলত অস্ত্রোপচারের আগে জিজেড চিকিৎসকদের তাঁর স্যাক্সোফোন বাজানোর সক্ষমতার কথা জানান। তখন চিকিৎসকেরা তাঁকে জাগিয়ে রেখে অস্ত্রোপচারের এটিকেই মোক্ষম হাতিয়ার বলে মনে করেন। পরে তাঁরা অস্ত্রোপচারের সময় তাঁবে ওই যন্ত্র বাজানোর অনুমোদন দেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যায়, এক দিকে চিকিৎসকেরা তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করছেন, অন্যদিকে জিজেড স্যাক্সোফোন বাজিয়ে চলেছেন।
ডা. ব্রোগনা বলেন, তাঁর আশা, জিজেড দ্রুতই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন। এমন একটি ব্যতিক্রমী অথচ সফল অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে নিজের গর্বের কথাও জানান তিনি।