২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বাজওয়া কি আরও এক মেয়াদ থাকবেন?

পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগে সরকারের হাতে বেশি দিন সময় নেই। শাহবাজ শরিফের সরকারের এই মেয়াদে সেনাপ্রধান নিয়োগকেই সবচেয়ে কঠিন কাজ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে আরেক মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া না হলে শীর্ষ ছয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল থেকে একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। খবর ডনের

বর্তমান সেনাপ্রধানের মেয়াদ আছে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ। ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ—নওয়াজের (পিএমএল-এন) একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী জানান, নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগে আগস্টের শেষ নাগাদ নেপথ্যের আলোচনা শুরু করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। মধ্য সেপ্টেম্বর নাগাদ নতুন সেনাপ্রধানের নাম ঘোষণা করতে পারেন তিনি।

পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪৩(৩) অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে সামরিক বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যক্তিগত তথ্যসহ চার থেকে পাঁচজন শীর্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেলের নাম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে থাকে সামরিক বাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স (জিএইচকিউ)। এই পদের জন্য উপযুক্ত কর্মকর্তা বেছে নিতে পরে তাঁদের নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়।

বাজওয়া কি আরও এক মেয়াদ থাকবেন?

২০২০ সালে পার্লামেন্টে পাস হওয়া এক আইন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাঁর বিবেচনায় সামরিক বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ বাড়াতে পারেন। তবে আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, বয়স ৬৪ বছর হলে সামরিক বাহিনীর প্রধানদের অবশ্যই অবসরে যেতে হবে।

বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার নভেম্বরে অবসরে যাওয়ার কথা। সেনাপ্রধানকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক নাটকীয়তার পর বাজওয়াকে ২০১৯ সালে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগস্টে সেনাপ্রধান বাজওয়ার মেয়াদ বর্ধিত করেন। কিন্তু এরপর সুপ্রিম কোর্ট সামরিক বাহিনীর প্রধানদের পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের দাবি করেন। এমন প্রেক্ষাপটে আইনটি পাস হয়।

আরও পড়ুন

জেনারেল বাজওয়ার বয়স ৬১ বছর। ফলে আরও এক মেয়াদ তাঁর দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে। এ কারণে আরও এক মেয়াদ জেনারেল বাজওয়ার সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থাকা নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে সামরিক বাহিনীর একটি সূত্রের মতে, নিজের আশপাশের লোকজনকে নভেম্বরেই অবসরে যাওয়া কথা জানিয়েছেন তিনি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরও সেনাপ্রধান অবসরে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনির

আসিম মুনির

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান হওয়ার দৌড়ে যে ছয়জন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রয়েছেন তাঁদের মধ্যে আসিম মুনির সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দুই তারকা জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও দুই মাস পর তিনি দায়িত্ব নেন। এ হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হবে নভেম্বরে, যখন বর্তমান সেনাপ্রধান অবসরে যাবেন।
নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের কয়েক দিন আগেই দুজনকে চার তারকা জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসিম মুনিরের নাম বর্তমান সেনাপ্রধান সুপারিশ করবেন কি না, সেটা দেখার বিষয়। অবশ্য এই ‘টেকনিক্যাল’ কারণে সেনাপ্রধানের দৌড়ে ‘ডার্ক হর্স’ হয়ে থাকতে হতে পারে আসিম মুনিরকে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা

সাহির শামশাদ মির্জা

সেনাপ্রধান হওয়ার দৌড়ে থাকা একই ব্যাচের চার লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মধ্যে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ শামশাদ মির্জা। সিন্ধু রেজিমেন্টের এই কর্মকর্তা সেনাবাহিনীতে মুগ্ধ করার মতো পেশাদার জীবনের অধিকারী। বিশেষ করে সাত বছর ধরে যখন তিনি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তিন তারকা জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর শামশাদ মির্জাকে জেনারেল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে সেনাপ্রধানের পর বাহিনীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে তাঁর অবস্থান তৈরি হয়। সমৃদ্ধ পেশাদার জীবনের জন্য তিনি সেনাপ্রধান অথবা জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান—এই দুই পদের যেকোনো একটির যোগ্য দাবিদার বলে মনে করে সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজহার আব্বাস

আজহার আব্বাস

উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজহার আব্বাস ভারত বিষয়ে সবচেয়ে অভিজ্ঞ। বর্তমানে তিনি চিফ অব জেনারেল স্টাফের দায়িত্বে আছেন। তিনি দক্ষতার সঙ্গে জিএইচকিউতে সেনাবাহিনীর আভিযানিক ও গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সরাসরি দেখভাল করছেন।

আজহার আব্বাসকে বর্তমান সেনাপ্রধানের আস্থাভাজন হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ভারতের সঙ্গে সীমান্তে (লাইন অব কন্ট্রোল/লক) ২০০৩ সালের অস্ত্রবিরতি চুক্তি মেনে চলার বোঝাপড়ায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

আরও পড়ুন

লেফটেন্যান্ট জেনারেল নোমান মাহমুদ

নোমান মাহমুদ

নোমান মাহমুদ বালুচ রেজিমেন্টের কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট পদে আছেন। কোয়েটার কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবেও তাঁর ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে।

নোমান মাহমুদ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মহাপরিচালক (অ্যানালাইসিস) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে তাঁকে তিন তারকা জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ

ফাইজ হামিদ

সেনাপ্রধান হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া ও ফাইজের একে অপরের সম্পর্কে ভালো জানাশোনা আছে। কারণ, তাঁরা একসময় একসঙ্গে কাজ করেছেন।

তিন তারকা জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর প্রথম ফাইজকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে নিয়োগ দেওয়া হয়। মাত্র দুই মাস পরই তাঁকে আকস্মিকভাবে আইএসআইয়ের পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

ফাইজ তৎকালীন ইমরান খান সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসম্ভব না হলেও সেনাপ্রধান হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া পিএমএল-এন সরকারের জন্য কঠিন হবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আমির

মোহাম্মদ আমির

আর্টিলারি রেজিমেন্টের এই কর্মকর্তাকে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার আস্থাভাজন হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। জিএইচকিউতে একসময় তিনি অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

এ ছাড়া ২০১১-১৩ মেয়াদে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সামরিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ আমির। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুবাদে আজকের রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ২০১৭-১৮ সালে মেজর জেনারেল হিসেবে তিনি লাহোরে দশম পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের পর পাকিস্তানে ১০ জন সেনাপ্রধান নিয়োগ পান। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকেই নিয়োগ দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বড় ভাই নওয়াজ শরিফ। সেনাপ্রধান পদে ‘নিজের লোক’ নিয়োগ দেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। অবশ্য এসব নিয়োগের কোনোটিই শেষ পর্যন্ত তাঁর জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি।