কাজ নেই, দলে দলে পাকিস্তান ছাড়ছেন শিক্ষিত তরুণেরা
কানাডার টরন্টোতে হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছেন পাকিস্তানি তরুণ তাহির (ছদ্মনাম)। চার মাস আগে তিনি দেশ ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের প্রত্যাশা তাঁকে দেশ ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট তাঁর দেশ ছাড়ার বড় একটি কারণ।
শুধু তাহির নয়, পাকিস্তানের আরও অনেক তরুণ একে একে দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন। এ ধারাবাহিকতায় গত বছর আট লাখের বেশি তরুণ চাকরির সন্ধানে পাকিস্তান ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক ব্যুরো। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৬। তার আগের বছর পাকিস্তান ছাড়েন আরও কম—৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৯ জন।
গত বছর আট লাখের বেশি তরুণ চাকরির সন্ধানে পাকিস্তান ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক ব্যুরো। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৬। তার আগের বছর পাকিস্তান ছাড়েন আরও কম—৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৯ জন।
চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে কাজ নেই, বেকারত্ব ক্রমেই বাড়ছে, এমন পরিস্থিতি এখন পাকিস্তানজুড়ে। আর এ পরিস্থিতি দেশটির হাজারো শিক্ষিত তরুণকে বিদেশে পাড়ি জমাতে উৎসাহ জোগাচ্ছে। এ বিষয়ে কানাডায় পাড়ি জমানো তাহির বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য আমার একটি কার্যকর পরিকল্পনা ও একটি শক্তিশালী পাসপোর্ট দরকার হবে।’ এখন তাহির আশা করছেন, একদিন তিনি কানাডা ও পাকিস্তানের যৌথ নাগরিক হবেন।
তাহিরের মতো অনেক মেধাবী ও কর্মচঞ্চল তরুণ উচ্চতর শিক্ষা ও অন্যান্য কারণে পাকিস্তান ছাড়ছেন। তাঁরা বিদেশে স্থায়ী হতে চান। আর দেশে ফিরতে চান না।
পাকিস্তানে আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকট চলছিল। করোনা মহামারি আর গত বছরের প্রলয়ংকরী বন্যা এ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সেই সঙ্গে মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির ক্রমাগত দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
খাবার ও জ্বালানির বাড়তি দামের লাগাম টানা এবং চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে পাকিস্তান সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিয়ে সংকট সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তরুণদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা পাকিস্তানকে দীর্ঘ মেয়াদে ভোগাতে পারে।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বিশেষ উদ্যোগবিষয়ক মন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষিত তরুণদের এভাবে দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের। এ সংখ্যা কমিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের। সেই সঙ্গে তরুণদের দেশেই যথাযথ কাজের পরিবেশ দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। এ জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তাই আশা করা হচ্ছে, এতে মেধাবী তরুণদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা কমবে।’
শিক্ষিত তরুণদের এভাবে দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের। এ সংখ্যা কমিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের। সেই সঙ্গে তরুণদের দেশেই যথাযথ কাজের পরিবেশ দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে।
চলমান অর্থনৈতিক সংকট শুরুর আগেও পাকিস্তানের অনেক শ্রমিক বিদেশে পাড়ি জমাতেন। তুলনামূলক কম আয় ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ সীমিত থাকায় তাঁদের অনেকে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। পরে দেশ ছেড়েছেন।
গত বছরের জুনে গ্যালাপ পাকিস্তান ও গিলানি ফাউন্ডেশনের এক যৌথ জরিপে দেখা গেছে, ৩০ বছরের নিচে বয়স এমন প্রতি তিনজন পাকিস্তানির একজন বিদেশে গিয়ে চাকরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা তরুণদের মধ্যে এই হার ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান গ্যালাপ পাকিস্তানের নির্বাহী পরিচালক বিলাল গিলানি।
তাহির বলেন, তাঁদের প্রজন্ম তাঁদের মা–বাবাদের চেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে। এক দশক আগেও পাকিস্তানে তাঁদের মা–বাবারা বাড়ি কিনতে পারতেন, বিনিয়োগ করতে পারতেন, এমনকি সম্পদ অর্জন করতে পারতেন।
চার মাস আগে পাকিস্তান ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী। এক বছরের শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাজ্যে যাওয়া ওই নারী বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি দুই ডিজিটের ওপরে রয়েছে। সব জিনিসের দাম বেড়েছে। আমি আর জীবনযাত্রার এই বাড়তি ব্যয় বহন করতে পারছিলাম না।’
পাকিস্তানের অপর একজন তরুণ ফ্রিল্যান্স চলচ্চিত্র নির্মাতা দেশ ছেড়ে দুবাইয়ে চলে গেছেন। তিনি জানান, সীমাহীন দুর্নীতি ও কোনো কাজের জন্য মজুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় লাগার বিষয়টি তাঁকে হতাশাগ্রস্ত করেছিল। এ কারণে তিনি পাকিস্তান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুই মাস আগে তিনি দুবাইয়ে যান। সেখানে নিজের পছন্দের কাজ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। সময়মতো ও পর্যাপ্ত মজুরি পাচ্ছেন।
পাকিস্তান থেকে মেধাবী তরুণদের বিদেশে চলে যাওয়া ঠেকাতে আরও উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা চালু ও তরুণদের কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে বলে মত দিয়েছেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল। তিনি বলেন, দেশে যদি তরুণদের যথাযথ পরিবেশ দেওয়া যায়, তাহলে তাঁরা বিদেশে যাবেন না।