সমাবেশ ঘিরে উত্তাল ইসলামাবাদ, নিহত ৭, সেনা মোতায়েন
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ডাকা সমাবেশ ঘিরে রাজধানী ইসলামাবাদ উত্তাল হয়ে উঠেছে। পথে পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা ডিঙিয়ে আজ মঙ্গলবার রাজধানী ইসলামাবাদের ‘ডি–চকে’ সমাবেশস্থলে পৌঁছে যান দলটির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
কারাবন্দী ইমরান খানের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ডি–চকে সমাবেশের ডাক দেয় পিটিআই। সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে অর্পণ করা হয়।
পিটিআইয়ের এই কর্মসূচিকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ অভিহিত করে দলীয় সব নেতা-কর্মীকে তাতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান খান। কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত রোববার ইসলামাবাদ অভিমুখে গাড়িবহর নিয়ে যাত্রা শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। এই গাড়িবহরে আছেন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিও। তিনি স্বামীকে মুক্ত না করে ঘরে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঠেকাতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয় সরকার। পথে পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। ডাকা হয় আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও। বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হয় পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীদের। বাধা ডিঙিয়ে নেতা-কর্মীরা ইসলামাবাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে ‘দেখামাত্র গুলির’ নির্দেশ দিয়ে রাজধানীতে সেনা মোতায়েন করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ডি–চক ঘিরে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বসানো ‘কনটেইনার’ বেয়ে ওপরে উঠছেন পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকেরা। এ সময় কনটেইনারের ওপর অবস্থান নেওয়া সেনাসদস্যদের সঙ্গে তাঁদের করমর্দন করতে দেখা যায়।
পথে পথে সংঘর্ষ, হতাহত
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আজও পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীদের পথে পথে সংঘর্ষ হয়। এ কর্মসূচি ঘিরে আধা সামরিক বাহিনীর তিন সদস্য ও পুলিশের এক সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি। পিটিআই নেতা–কর্মীদের এই ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিজেদের তিন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পিটিআই। দলের চেয়ারম্যান গহর আলী খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া এক বার্তায় তাঁদের কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নিরীহ মানুষের ওপর গুলি না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা ডি–চকে পৌঁছে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের পাশাপাশি গুলি চালানো হয়েছে বলে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান নেতা–কর্মীরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা সত্ত্বেও ডি–চকেই সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর। পিটিআইয়ের এই কর্মসূচিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। গান্দাপুর বলেন, ‘ডি–চক মানে ডি–চকই। সেখানেই সমাবেশ হবে।’
দাবি আদায়ে অনড় ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিও। স্বামীকে মুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন। এ সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সাবেক ফার্স্ট লেডি বলেন, ‘কথা দিন, খান (ইমরান খান) যতক্ষণ না আমাদের সঙ্গে আসছেন, ততক্ষণ আমরা ডি–চক ছেড়ে যাব না।’
বড় অভিযানের শঙ্কা
পিটিআই নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অব্যাহত সংঘর্ষের মধ্যে ইসলামাবাদের সব দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ডি–চকসহ আশপাশের সেনাসদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বড় ধরনের অভিযানে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।
পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঘিরে কয়েক দিন ধরেই পাকিস্তানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল চতুর্থ দিনের মতো মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট–সেবাও ব্যাহত হয়। এ ছাড়া বিক্ষোভ ঘিরে পিটিআইয়ের কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে এক বিবৃতিতে মানবাধিকার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশসহ মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে এবং সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’