পাকিস্তানও কি শ্রীলঙ্কার পথে
শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনা টানার আগে আসুন সাম্প্রতিক একটা ঘটনা জেনে নিই। কিছুদিন আগে পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল চা পান কমিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দৈনিক চা পানের পরিমাণ দুয়েক কাপ কমিয়ে দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, আমাদের ঋণ নিয়ে চা আমদানি করতে হয়।’
পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম প্রধান চা আমদানিকারক। দেশটিতে চা জনপ্রিয় পানীয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটির মানুষ ৪০ কোটি ডলারের চা পান করেছে। গেল অর্থবছরে ছয় কোটি ডলারের চা আমদানি করেছে পাকিস্তান। এখন ডলার সংকটে ভোগায় চা পান কমাতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে দেশটির সরকার।
পাকিস্তানের অর্থনীতির সব সূচক এখন নেতিবাচক। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত প্রতিদিন কমছে। মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী, কমছে প্রবাসী আয়। মুদ্রার মান কমে এযাবৎকালে সর্বনিম্ন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। চলতি তহবিলেও ঘাটতি অনেক।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ঋণ চেয়েও পড়েছে কঠিন সব শর্তের মুখে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির জন্য অধ্যাদেশে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বন্ধুপ্রতিম দেশের কাছেও আর্থিক সাহায্য চাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তো আছেই। এ কারণে দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের অবনতি ঘটেছে। সংকট মোকাবিলা কঠিন করেছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।
কতটা সংকটে অর্থনীতি
গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির দরপতন হয়েছে ৪ হাজার ১০০ শতাংশ। ১৯৭২ সালের মে মাসে ১ ডলারের জন্য ৪ দশমিক ৭৬ রুপি গুনতে হতো। গতকাল শনিবার পাকিস্তানের খোলাবাজারে ১ ডলার বিক্রি হয়েছে ২৫০ রুপিতে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত যেমন ক্রমাগত কমছে, তেমনি অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। পাকিস্তানে এখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুত রয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতি সচল রাখতে কমপক্ষে তিন মাসের ডলার মজুতের কথা বলা হলেও পাকিস্তানের কাছে বড়জোর এক মাসের ডলারের মজুত আছে।
বিদেশি ঋণের কারণে বিপজ্জনক অবস্থানে থাকা দেশগুলোকে নিয়ে একটি তালিকা করে অর্থনীতিবিষয়ক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। ওই তালিকায় পাকিস্তানের অবস্থান এখন চতুর্থ। বর্তমানে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ। গত মার্চে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ ছিল ১২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণ ও সুদ মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে দেশটিকে ২১ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে। ১ জুলাই থেকে এই অর্থবছর শুরু হয়েছে।
পাকিস্তানের যে বিদেশি ঋণ, তার অর্ধেক চীনের। বেইজিংয়ের নেওয়া সড়ক ও অঞ্চল (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই) প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের অধীন পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রকল্পে ৬৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে চীন।
এদিকে ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ডলারের ওপর চাপ বাড়লেও চলতি হিসাবেও রয়েছে বড় ঘাটতি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ ঘাটতি ছিল ১৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরেও এ ঘাটতি ছিল ২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন। এ ঘাটতির কারণেও আরও বিপদে পড়বে ইতিমধ্যে সংকটে পড়া পাকিস্তান।
এ অর্থবছরে পাকিস্তানের চলতি হিসাবে এ ঘাটতি আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, বিদেশি ঋণের প্রবাহ কম। একই সঙ্গে ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বন্ড কেনায়ও আগ্রহ কমেছে। বলা হচ্ছে, আইএমএফের তহবিল ছাড় না হলে পাকিস্তানে বৈদেশিক মুদ্রার এ ঘাটতি কমার আপাতত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
পাকিস্তানে জ্বালানির মূল্য এখন আকাশচুম্বী। পেট্রল ও ডিজেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ২৩০ ও ২৬০ রুপিতে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ–সংকট। শহর ও গ্রাম সব জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ক্ষুব্ধ মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছে। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।
জ্বালানির দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে বাজারে। বিশেষ করে, মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রধান একটি কারণ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার আশায় জ্বালানির ওপর ভর্তুকি তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। এরপর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে।
২০২১ সালের নভেম্বর থেকে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আর রুপির দরপতনে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। গত জুনে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ছিল ২১ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ গত বছরের জুনে মূল্যস্ফীতির এ হার ছিল ৯ দশমিক ৭। পরিবহন ও খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে তা ৬০ ও ৪০ শতাংশ। এতে দেশটিতে যাতায়াত ভাড়ার সঙ্গে অনেক ভোগ্যপণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
এদিকে আমদানি ও রপ্তানি ভারসাম্যহীন। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট আমদানি ছিল ৮৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। বিপরীতে রপ্তানি ছিল ৩৯ দশমিক ৪২ বিলিয়ন। বাণিজ্য ঘাটতি ৪৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন। আগের অর্থবছরে এ বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা কেন
শ্রীলঙ্কায় এখন যে সংকট চলছে, পাকিস্তানও সেই পথেই ধাবিত হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবেদরা। তাঁরা বলছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতিও শ্রীলঙ্কার মতো ধুঁকছে। শ্রীলঙ্কার মতোই ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি সংকটে পড়েছে পাকিস্তান। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার মতো পাকিস্তানও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংকটে পড়েছে। এতে খাদ্য ও জ্বালানির মতো নিত্যপণ্যের আমদানি কমাতে হয়েছে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার মতোই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরির পথ তৈরি করে দিয়েছে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করলে শ্রীলঙ্কার মতো পাকিস্তানের মানুষও রাস্তায় নামবে বলে ধারণা।
আর্থিক দুর্দশার প্রতিবাদে কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এতে সংকটের অবসান তো হয়নি বরং রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এমন সংকট মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কার সরকারও আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা নির্দ্বিধায় একের পর এক ঋণ নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় নগদ ঋণে অল্প দিনে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি। তবে ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা যখন ঋণের অর্থ শোধ করতে পারছিল না তখন চীনের কাছে বন্দরটি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিয়ে দেয় কলম্বো।
হাম্বানটোটার মতো গোয়াদরেও ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে চীন। পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের এই গভীর সমুদ্রবন্দর পাকিস্তানে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের মূল কেন্দ্র। কারও কারও আশঙ্কা, চীনের প্রভাব আরও বাড়লে গোয়াদরের পরিণতিও শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটার মতোই হবে।
তবে চীন থেকে ঋণ নেওয়ায় পাকিস্তানের অর্থনীতির এ দশা—বিশ্লেষকের এমন পর্যবেক্ষণও অবশ্য অতিরঞ্জিত। শ্রীলঙ্কার মতোই পাকিস্তানের বেশির ভাগ অর্থনৈতিক সমস্যার প্রধান কারণ অর্থনীতি নিয়ে নীতিগত ভুল সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনার অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা।
সংকট কাটাতে পূর্বের মতো এবারও আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে ইসলামাবাদ। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে বারবার আইএমএফের দ্বারস্থ হওয়া পাকিস্তানের জন্য কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। অর্থনৈতিক সংকট যত ঘনীভূত হবে, ততই শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা তৈরির ঝুঁকিও বাড়বে।
শ্রীলঙ্কার মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন জ্বালানি ও খাদ্যের মতো নিত্যপণ্যের সংকটে। দীর্ঘ লাইনে কয়েক দিন দাঁড়িয়ে থেকেও জ্বালানি না পেয়ে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর প্রতিবাদে তাঁরা রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভ দমনের সব রকমের চেষ্টা করে সরকার। এতে মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়ে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের ঢুকতে দেখে প্রেসিডেন্ট পালিয়ে যান। দেশত্যাগ করে পদত্যাগ করেন।
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগে তাঁর অনুগত প্রধানমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে পার্লামেন্ট। কিন্তু এতে রাজনীতি ও অর্থনীতির অচলাবস্থা কাটেনি। পাকিস্তানের রাজনীতিতেও সংকট চলছে। ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে স্থিতিশীল একটি সরকার থাকার কথা থাকলেও পাকিস্তানে এখন তা নেই। সামনের দিনগুলোয় অস্থিতিশীলতা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কায় সংকট শুরুর আগে যেসব লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও একই পথে আছে।
সমাধানসূত্র রাজনীতিতে
কোভিড মহামারির প্রকোপের পর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের মতো পাকিস্তানের অর্থনীতি ধুঁকছে। ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানও দেউলিয়া হওয়ার পথে। কিন্তু এই সংকট নিরসনের সমাধানসূত্র অর্থনীতির চেয়ে রাজনীতিতে আছে বেশি।
শ্রীলঙ্কার মতো পাকিস্তানেরও ঋণের বোঝা বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে। ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রার মান ধারাবাহিকভাবে কমছে। বর্তমানে দেশটির নগদ তহবিলও কমেছে। রাজনীতিতে অচলাবস্থার মধ্যে জ্বালানি, খাদ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণের দাম বেড়েই চলেছে। সামনের মাসগুলোয় পাকিস্তানের অর্থনীতির সংকট আরও বাড়বে। সংকট বাড়ছে রাজনীতিতেও।
পাকিস্তানে বিক্ষোভ শুরু হলে প্রথমত যেটা হবে, দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বে একটা শূন্যস্থান তৈরি হবে। পাকিস্তানি কলাম লেখক জাহিদ হোসেইন সেই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে পাকিস্তানের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতোই হবে।
জাহিদ হোসেইন পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত এক কলামে লিখেছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি যে কারণে ধসে পড়ে, তা পাকিস্তানেও এখন দৃশ্যমান। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংকটে শ্রীলঙ্কা খাদ্য, জ্বালানিসহ জরুরি পণ্যগুলো আমদানি করতে পারছিল না। অনেক বছর ধরে দেশটির ঋণের পরিমাণ বাড়ে। ঋণের সঙ্গে জিডিপির অনুপাত ছিল অনেক বেশি। এদিকে ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করতে না পেরে স্বাধীনতার পর প্রথমবার শ্রীলঙ্কা ঋণখেলাপি বা দেউলিয়া হয়েছে।
একদিকে পাকিস্তানে যখন অর্থনীতির নানা সূচকের ক্রমাগত অবনতিতে দেশটির দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, তখন অন্যদিকে গত এপ্রিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে সেই ঝুঁকি আরও বেড়েছে। পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া প্রয়োজন। অন্ততপক্ষে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য দেশটির সরকার যে তদবির চালাচ্ছে, তার জন্যও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার।
ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এক ডজন দল নিয়ে জোট করে পাকিস্তানে সরকার গঠিত হয়েছে। এসব দলের মধ্যেও আবার বিভাজন আছে। এ ছাড়া পার্লামেন্টবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন জোটের আসনের ব্যবধান খুবই কম। এই সরকারই সংকট মোকাবিলার দায়িত্বপ্রাপ্ত।
পাকিস্তানের ব্যাংক খাতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থনীতির এমন দশা কিন্তু কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সেই উদ্বেগ নেই। বিশেষ আমদানি মূল্য কীভাবে শোধ হবে সেই চিন্তা নেই। ডলারের মজুত ইতিমধ্যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমদানির ডলারের জোগান দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। সামনে আরও কঠিন সময় আসছে।
দ্রুত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়ের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিনিধি পর্যায়ের সমঝোতায় পৌঁছেছে আইএমএফ। তবে এ ক্ষেত্রে কঠিন সব শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির শর্ত মেনে জ্বালানির ওপর ভর্তুকি কমিয়েও পার পায়নি। ঋণ পাওয়ার জন্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কাছ থেকে ইসলামাবাদকে ৪০০ কোটি ডলারের বন্দোবস্ত করতে বলেছে আইএমএফ। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান ছয়টি আইনকে পাস কাটিয়ে সম্প্রতি নতুন অধ্যাদেশে অনুমোদন দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আইএমএফের কঠিন সব শর্ত মেনে পাকিস্তানের ঋণ পাওয়াটা সহজ হবে না। সামনে আবার নির্বাচন। ইতিমধ্যে ভর্তুকি কমিয়ে অজনপ্রিয় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে। ভবিষ্যতে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যার প্রভাব পড়বে ভোটব্যাংকে। এ ছাড়া আইএমএফ বা বন্ধু দেশের কাছে ঋণ নিয়ে পাকিস্তানের সংকট কাটবে না। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণ করতে হবে। এখন পাকিস্তানে যেটা দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে পাঞ্জাবের উপনির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ জয় পেয়েছে। নানা নাটকীয়তা শেষে পাঞ্জাবের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ। পাঞ্জাবে জয়ের কারণে আসন্ন নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার আশা করছে পিটিআই।
দেশের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য শাহবাজ শরিফ সরকারের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন ইমরান খান। এ কাজ করে ভোটারদের মন জয়েও সফল হচ্ছেন তিনি। যার প্রমাণ পাঞ্জাব উপনির্বাচনে পিটিআইয়ের জয়। তাই এই সরকার কত দিন থাকবে এবং সামনে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে কি না, সেই অনিশ্চয়তা যেমন রয়েছে, তেমনি পাকিস্তান চলমান এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট উতরাতে পারবে কি না, তা-ও অনিশ্চিত।
সূত্র: ডন, দ্য ডিপ্লোম্যাট, বিবিসি, এনডিটিভি, রয়টার্স, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, আউটলুক ইন্ডিয়া, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট