সুন্নি ইত্তেহাদে যোগ দিচ্ছেন ইমরানের পিটিআই সমর্থিত বিজয়ী প্রার্থীরা
নির্বাচনে কারচুপির জোরালো অভিযোগের মধ্যেই পাকিস্তানে নতুন সরকার গঠনের তোড়জোড় চলছে। ভোটের ফলাফলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং তৃতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জোট সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে বসে নেই সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফও (পিটিআই)।
নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পান পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রতীক বাতিল হওয়ায় দল হিসেবে নির্বাচন করতে পারেননি পিটিআইয়ের প্রার্থীরা। এখন সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল (এসআইসি) নামের একটি দলে যোগ দিচ্ছেন তাঁরা।
পিটিআই চেয়ারম্যান গহর আলী খান আজ সোমবার বলেছেন, এ বিষয়ে সুন্নি ইত্তেহাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে করেছে তাঁর দল। চুক্তির কাগজপত্র আজই নির্বাচন কমিশনে (ইসিপি) জমা দেওয়ার কথা।
পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় পরিষদে ৭০টি আসন আর চারটি প্রাদেশিক পরিষদ মিলিয়ে ২২৭টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। এসব আসন কেবল নির্বাচনে জয়ী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হয়।
গহর আলী বলেন, ‘সংরক্ষিত আসন পেতে ও আমাদের নির্বাচিত সদস্যদের সুরক্ষা দিতে দলটিতে (সুন্নি ইত্তেহাদ) যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। আমরা এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র ইসিপিতে জমা দেব।’
এদিকে চুক্তির অংশ হিসেবে পিটিআই সমর্থিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আইনপ্রণেতারা সুন্নি ইত্তেহাদে যোগ দেওয়ার হলফনামা জমা দেওয়া শুরু করেছেন। তাঁরা দলটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন।
পিএমএল-এন ও পিপিপি বৈঠক
নির্বাচনের ১১ দিন পার হলেও পাকিস্তানে নতুন সরকার গঠনের অনিশ্চয়তা কাটেনি। নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৯০টি আসনে জয় পেয়েছেন। পিএমএল-এন ও পিপিপি যথাক্রমে ৭৯ ও ৫৪টি আসন পায়।
সরকার গঠনে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পিএমএল-এন ও পিপিপি। সরকার গঠন করতে হলে ৩৩৬ আসনের (সংরক্ষিত আসনসহ) জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসন পেতে হবে তাদের। এ জন্য অন্য দলগুলোর সঙ্গেও তাদের জোট করতে হবে।
সরকার গঠন নিয়ে আজ পিএমএল-এন ও পিপিপির মধ্যে পঞ্চম দফা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সরকার গঠনে দল দুটির ভূমিকা কী হবে এ নিয়ে শেষ মুহূর্তের দর-কষাকষি চলছে। এর আগে সরকার গঠনে সমর্থন দিলেও মন্ত্রিসভায় যোগ না দেওয়ার কথা বলেছিল পিপিপি।
গত রোববার এক সমাবেশে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি বলেছেন, সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির সূত্র তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পিএমএল-এনের সঙ্গে পিপিপির প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির আলোচিত সূত্রে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর পদ দুই দলের মধ্যে মেয়াদ হিসাবে ভাগ হবে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে বিলাওয়াল বলেছেন, তাঁর বাবা আসিফ আলী জারদারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে পিপিপির প্রার্থী হবেন।
এদিকে, জাতীয় পরিষদের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী পিএমএল-এনে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয় পরিষদের তিনটি আসনের ফলাফল স্থগিত করেছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীদের আবেদনে এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। নির্বাচনে জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান অভিযোগের মধ্যে এই আদেশ দিলেন আদালত।
ইমরানকে সামনে আনছে পিটিআই
কয়েক দিন বিরোধী দলের আসনে বসার কথা বললেও সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে পিটিআই। দলটি কেন্দ্র এবং একাধিক প্রদেশে সরকার গঠনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কারাবন্দী ইমরান খানকে সামনে আনছেন দলটির নেতারা।
পিটিআইয়ের সিনেটর ফয়সাল জাভেদ বলেছেন, মিয়াওয়ালি থেকে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (ইমরান) আবারও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন।’
জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিটিআইয়ের এ নেতা আরও বলেন, দেশের ইতিহাসে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল নজিরবিহীন।