পাকিস্তানের ইতিহাসে মরিয়ম নওয়াজই প্রথম, আরও ‘প্রথম’ যাঁরা
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মরিয়ম নওয়াজ। দেশটির ৭৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নারী মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন।
মরিয়ম দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে। মরিয়মের চাচা শাহবাজ শরিফও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শাহবাজ। এর আগে মরিয়মের চাচাতো ভাই হামজা শরিফ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মরিয়মের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানে ‘প্রথম’ হওয়া ও সফল কয়েকজন নারীর গল্প তুলে ধরা হলো। যাঁরা পাকিস্তানের মতো একটি রক্ষণশীল সমাজে বাধার প্রাচীর ভেঙে সফল হয়েছেন।
বেনজির ভুট্টো
১৯৮৮ সালে মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেনজির ভুট্টো। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যখন শপথ নেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৫ বছর। নারী-পুরুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোয় নারীদের পিছিয়ে থাকাকে বিবেচনায় নিলে পাকিস্তানের ইতিহাসে ছিল এ এক বড় ঘটনা। বেনজির পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন বেনজির।
বেগম লিয়াকত আলী খান
পাকিস্তানের সাবেক ফার্স্ট লেডি বেগম রানা লিয়াকত আলী খান ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম নারী গভর্নর। সিন্ধু প্রদেশের গভর্নর ছিলেন তিনি। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও তিউনিসিয়ায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন বেগম লিয়াকত আলী খান। তাঁর স্বামী লিয়াকত আলী খান ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
শামশাদ আখতার
পাকিস্তানের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থমন্ত্রী শামশাদ আখতার ছিলেন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের প্রথম নারী গভর্নর। ২০০৬ সালের ২ জানুয়ারি থেকে তিন বছর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
নিগার জোহার
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম নারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিগার জোহার। তামাঘা-ই-ইমতিয়াজ, ফাতিমা জিন্নাহ স্বর্ণপদক ও হিলাল-ই-ইমতিয়াজ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আয়েশা মালিক
২০২২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আয়েশা মালিক। লাহোর হাইকোর্টের বিচারক থাকাকালে ২০২১ সালে এক রায় দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। সেই রায়ে ধর্ষণের শিকার নারীর কুমারীত্ব পরীক্ষার বিষয়টিকে বেআইনি ও সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করেন আয়েশা মালিক।
মালালা ইউসুফজাই
পাকিস্তানের নারীদের ইতিহাসে অনন্য নাম মালালা ইউসুফজাই। ২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে মালালাই সর্বকনিষ্ঠ। তাঁর আগে ১৯৭৯ সালে প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান আবদুস সালাম। পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন তিনি।
ফাহমিদা মির্জা
২০০৮ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে দেশটির পার্লামেন্ট নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হন ফাহমিদা মির্জা। শুধু পাকিস্তান নয়, তিনি দক্ষিণ এশিয়ারই কোনো দেশের প্রথম নারী স্পিকার।
হিনা রব্বানি খার
২০১১ সালের পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান হিনা রব্বানি খার। দেশটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী, যিনি এই দায়িত্ব পান। ওই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৩ বছর। এরপর শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের বিগত জোট সরকারেও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন হিনা রব্বানী খার।
শামিনা খেয়াল বেগ
২০১৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন শামিনা খেয়াল বেগ। এরপর পাকিস্তানের প্রথম নারী হিসেবে ২০১৪ সালের মধ্যে বিশ্বের সর্বোচ্চ সাত পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন তিনি। ২০২২ সালে জয় করেন কিলিমাঞ্জারো-২।
আয়েশা ফারুক
পাকিস্তানের প্রথম নারী পাইলট হিসেবে যুদ্ধবিমান চালান আয়েশা ফারুক। ২০১৩ সালের পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বৈমানিক হিসেবে এ রেকর্ড গড়েন তিনি।