‘শেষ বল’ পর্যন্ত লড়বেন ইমরান খান
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, দেশের জন্য তিনি শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এক টুইটে তিনি এ কথা বলেন।
ডন–এর খবরে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ইমরান খান। এই সঙ্গে তিনি নিজ দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্যদের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করবেন। এ ছাড়া আজ তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। গতকাল টুইটে এসব কথা নিজেই জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল রাতেই পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করেছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ দিনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় দেন। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপরও ভোটাভুটি হবে। এ জন্য আগামীকাল শনিবার দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা না করা অবধি পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না। এর আগে গত ৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী ইমরানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
এ প্রক্রিয়াকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের দিনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন। গতকাল পার্লামেন্ট পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই প্রধানমন্ত্রীর। এ–সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হলো।’
ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা না থাকা নিয়ে চরম রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। ইমরানের দাবি, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ও বিদেশিরা এক হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন ইমরানসহ অনেকেই। এমনকি রাশিয়া অভিযোগ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবাধ্য’ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শাস্তি দিতে চেয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইমরান খানের বিরোধীদের অর্থায়ন করে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে তার সরকার পতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে ইমরান খানের বিরোধীদের দাবি, ২০১৮ সালে সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান। এখন তাঁর মাথার ওপর থেকে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ছায়া সরে গেছে। যদিও কোনো পক্ষই বিষয়টি স্বীকার করে না। এ বিষয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে ‘গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহ’ করেছেন ইমরান খান।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। জেনারেলরা নানা অজুহাতে রাষ্ট্রের শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। তাই বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামীকাল শনিবার পাকিস্তানের ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিন নির্ধারিত হবে ইমরান খানের ভাগ্য। হয় তিনি বিদায় নেবেন, নয়তো তাঁর ইতিহাস গড়ে পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পথ সুগম হবে।