পাকিস্তানে বৃহৎ শিল্প ও ধনীদের ওপর ‘সুপার ট্যাক্স’ আরোপ
বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে বৃহৎ শিল্প এবং যাঁদের আয় বেশি, তাঁদের ওপর ‘সুপার ট্যাক্স’ আরোপ করেছে পাকিস্তান। বৃহৎ শিল্পগুলোর ওপর ১০ শতাংশ সুপার ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। আর যাঁদের বার্ষিক আয় ১৫ কোটি রুপির বেশি, তাঁদের ১-৪ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত কর দিতে হবে। খবর ডনের।
গতকাল শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বৃহৎ শিল্পগুলোর ওপর ১০ শতাংশ সুপার ট্যাক্স আরোপের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে দেশের দরিদ্রদের সহায়তার জন্য রাজস্ব বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহৎ শিল্পগুলো বিবেচনায় সিমেন্ট, ইস্পাত, চিনি, তেল-গ্যাস, সার, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, পোশাক, ব্যাংক, গাড়ি, সিগারেট, কোমল পানীয়, রাসায়নিক ও উড়োজাহাজ ১০ শতাংশ ‘সুপার ট্যাক্সের’ আওতায় আসছে।
ধনীদের ওপর আরোপ করা করকে ‘দারিদ্র্য বিমোচন কর’ বলা হচ্ছে। বার্ষিক আয় ১৫ কোটি রুপির বেশি হলে ১ শতাংশ, ২০ কোটির বেশি হলে ২ শতাংশ, ২৫ কোটির বেশি হলে ৩ শতাংশ ও ৩০ কোটির বেশি হলে ৪ শতাংশ অতিরিক্ত কর দিতে হবে।
টুইটে অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বলেন, সব খাতে ৪ শতাংশ সুপার ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে।
তবে বিশেষ ১৩টি খাতে আরও ৬ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে, যা সব মিলিয়ে ১০ শতাংশ হবে। ফলে তাদের কর ২৯ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।
পরে সমাপনী বাজেট অধিবেশনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগের চারটি রেকর্ড বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য এককালীন এই সুপার ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে।
ভাষণে শাহবাজ শরিফ এই করারোপকে বাজেটের ‘কঠিন’ সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশকে ‘মারাত্মক ঝুঁকি’ থেকে রক্ষায় এই ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোট সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকারের সামনে দুটি বিকল্প ছিল—নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া কিংবা কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ডুবন্ত অর্থনীতিকে সামাল দেওয়া।
শাহবাজ শরিফ বলেন, জনগণকে সংকটে ফেলে সরে যাওয়া এবং অন্যদের মতো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন সহজ ছিল। কিন্তু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সরকার দ্বিতীয় বিকল্পটিই গ্রহণ করেছে।
কঠিন সময়ে দরিদ্রদেরই বেশি ভুগতে হয় উল্লেখ করে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আজ সামর্থ্যবানদের তাঁদের দায়িত্ব পালনের সময় এসেছে। এখন তাঁদের নিঃস্বার্থ প্রমাণের সময় এসেছে। আমি আত্মবিশ্বাসী, তাঁদের দায়িত্ব তাঁরা পুরোপুরি পালন করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর সংগ্রহ যেসব প্রতিষ্ঠানের কাজ, তাদের উচিত ধনীদের থেকে কর সংগ্রহ করে গরিবদের দেওয়া। ‘বড় বড় ব্যক্তিদের’ কর ফাঁকি দেওয়ারও কড়া সমালোচনা করেন তিনি।
ঋণে জর্জর পাকিস্তানের রিজার্ভে টান পড়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঋণ প্যাকেজের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। ঋণ পেতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় সংকোচন ও বাজেট ঘাটতি কমাতে বাড়তি করারোপের মতো শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।