এ যেন ক্রিকেট খেলায় উড়ন্ত বল ধরার (ক্যাচ) দৃশ্য। অথবা বাংলা নাটকে গাছ থেকে পড়ন্ত আম ‘টপাক’ করে ধরে ফেলার মতো দৃশ্য। ছয়তলা থেকে একটি শিশু মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, আর একজন ছোঁ মেরে এসে তাকে আলতো করে ধরে ফেললেন! শিশুটি প্রায় আঘাত ছাড়াই প্রাণে বেঁচে গেল!
বাস্তবে এমন ঘটনাই ঘটে গেল ইতালির তুরিন শহরে গত শনিবার। এ নিয়ে স্বয়ং দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট দিয়েছেন। এ ঘটনার নায়কের নাম মাত্তিয়া আকুজ্জি (৩৭)। পেশায় ব্যাংকার। আর পড়তে যাওয়া শিশুর বয়স ৩ বছর।
এবার সরাসরি ঘটনার বর্ণনায় আসা যাক। রোজকার মতো শনিবার সকালে বন্ধুকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছিলেন মাত্তিয়া আকুজ্জি। এ সময় তাঁরা এক মেয়েশিশুর কান্না শুনতে পান। তাকিয়ে দেখেন, একটি শিশু ছয়তলার (ফিফথ ফ্লোর) বারান্দার প্রান্তসীমায় টলমলভাবে হাঁটছে আর নিচে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। এ সময় আকুজ্জি চিৎকার করে শিশুটিকে বারান্দার কোনো কিছু আঁকড়ে ধরার কথা বলেন। কিন্তু শিশুটি তা করতে পারল না।
আকুজ্জি বলেন, যখন তিনি দেখলেন শিশুটি পড়ে যাবে যাবে ভাব, তখনই তিনি দৌড়ে শিশুটি বরাবর নিচে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর মাটিতে পড়ার আগেই শিশুটিকে আলতোভাবে ধরে ফেললেন।
আকুজ্জি বলেন, পুরো ঘটনাটি ঘটেছে মুহূর্তের মধ্যে। পড়ার পর কিছুক্ষণ শিশুটি একদম নিস্তেজ ছিল। এরপর সে কাঁদতে থাকে, হালকা আহত হয় সে।
আকুজ্জি এখন ইতালির হিরো। প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি তাঁকে এক্স পোস্টে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘অনেক সম্মান ও কৃতজ্ঞতা এই তরুণ বীরের প্রতি।’ একজন নাগরিক হিসেবে অসামান্য কাজ করায় আকুজ্জিকে রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক ‘সিভিল ভেলর’ স্বর্ণপদক দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের সদস্য ক্যামিলা লরেতি। তুরিনের মেয়র স্টিফানো লো রুশোও এই ব্যাংকারের বীরত্বের স্বীকৃতির পক্ষে কথা বলেছেন।
তবে আকুজ্জি বলেছেন, কোনো স্বীকৃতি বা বীরত্বগাথার জন্য তিনি শিশুটিকে বাঁচাতে এমন ঝুঁকি নেননি। এটি তাঁর স্বভাবজাত অভ্যাস।
শিশুটি কীভাবে বারান্দার প্রান্তসীমায় এল, তা তদন্ত করে দেখছে ইতালির পুলিশ বাহিনী।