পেজার ও ওয়াকিটকি তৈরির কথা স্বীকার করছে না কোনো প্রতিষ্ঠান
লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর কাছে পেজার (তারহীন যোগাযোগের যন্ত্র) বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে তাইওয়ান ও বুলগেরিয়া। গত মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর ব্যবহার করা কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনাকে হিজবুল্লাহর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পেজার বিস্ফোরণের পরদিনই হিজবুল্লাহ সদস্যদের হাতে থাকা ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। এ দুই ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় তিন হাজার। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসরায়েল দায়ী। এ ঘটনা ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। তবে এ হামলার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
তাইওয়ানভিত্তিক গোল্ড অ্যাপোলো এ সপ্তাহে বলেছে, হামলা ব্যবহার হওয়া পেজারগুলো তারা উৎপাদন করেনি। হাঙ্গেরিভিত্তিক কোম্পানি বিএসি এসব পেজার তৈরি করেছে, যাদের গোল্ড অ্যাপোলোর ব্র্যান্ড ব্যবহারের সনদ ছিল।
এ নিয়ে তদন্ত শুরু হলে গত বৃহস্পতিবার বুলগেরিয়ার নামও সামনে আসে। এর আগে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সোফিয়াভিত্তিক নরটা গ্লোবাল লিমিটেড এসব পেজার বিক্রির সঙ্গে যুক্ত ছিল।
তবে বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিএএনএস গতকাল শুক্রবার বলেছে, তর্কাতীতভাবে এটি প্রতিষ্ঠিত যে লেবাননে হামলা ব্যবহৃত পেজারগুলো বুলগেরিয়ায় আমদানি-রপ্তানি কিংবা এ দেশে তৈরি করা হয়নি।
পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করছে লেবাননের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। লেবাননের একটি জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, হিজবুল্লাহর কেনা পাঁচ হাজার পেজারের ভেতরে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
বিশ্লেষকেরা বলেছেন, গোয়েন্দারা সম্ভবত হিজবুল্লাহর কাছে পৌঁছে দেওয়ার আগে পেজারগুলোয় বিস্ফোরক ঢুকিয়ে রেখেছিলেন। লেবাননের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, পেজারগুলো নেওয়ার জন্য হিজবুল্লাহকে বিশেষ প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। নাশকতার উদ্দেশ্যে এগুলো হিজবুল্লাহর কাছে পৌঁছানো হয়।
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যদের কাছে থাকা পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার পর বেশ কিছু ছবি সামনে এসেছে। এসব পেজার কারা তৈরি করছে, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এর মধ্যে নাম এসেছে তিনটি কোম্পানির। এর মধ্যে রয়েছে তাইওয়ান, হাঙ্গেরি ও জাপানের একটি কোম্পানির নাম।
বুদাপেস্টের একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, বুদাপেস্টের কোম্পানিটি বাণিজ্যের মধ্যস্থতাকারী। হাঙ্গেরিতে তাদের কোনো উত্পাদন কারখানা নেই।
এদিকে যে ওয়াটটকি বিস্ফোরিত হয়েছে, সেগুলোর মডেলে জাপানের প্রতিষ্ঠান আইকমের লোগো দেখা গেছে। এ বিষয়ে আইকম জানিয়েছে, লেবাননে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে, ওই ধরনের মডেল ১০ বছর আগেই তৈরি করা বন্ধ করেছে তারা। তাই হিজবুল্লাহর কাছে যাওয়া যন্ত্রগুলো তাদের কি না, তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
আইকমের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণমাধ্যমে যেসব তথ্য এসেছে, তার তদন্ত করা হচ্ছে। ওসাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদেশি বাজারের জন্য তাদের পণ্য কেবল অনুমোদিত পরিবেশকদের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। জাপানের নিরাপত্তা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ প্রবিধান অনুযায়ী, রপ্তানি পরীক্ষা করে তবে তা ছাড়া হয়।
তবে এর আগে আইকম সতর্ক করে বলেছিল, তাদের নামে ভুয়া পণ্য বাজারে পাওয়া যায়। বিশেষ করে যেসব পণ্য তারা আর বাজারজাত করে না, এমন ভুয়া পণ্য বাজারে পাওয়া যায়। একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছে, প্রায় পাঁচ মাস আগে হিজবুল্লাহ সহজে বহনযোগ্য রেডিও যন্ত্রগুলো কিনেছিল।