হামাস-হিজবুল্লাহর মতো হুতিদের পরিণতি হবে: হুঁশিয়ারি ইসরায়েলের

ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হুতি বিদ্রোহীরাফাইল ছবি: রয়টার্স

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান–সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই চলছে ইসরায়েলের। এরই মধ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও গাজা উপত্যকার হামাসের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে দেশটি। এতে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে গোষ্ঠী দুটি। প্রাণ হারিয়েছেন তাদের বেশ কয়েকজন নেতা। এমন পরিস্থিতি ইসরায়েল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তাদের ভূখণ্ডে হামলা হলে হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো একই পরিণতি হবে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের। যদিও ইসরায়েলের এ হুঁশিয়ারির পরও দেশটিতে হামলা অব্যাহত রেখেছে হুতিরা।

হুতিদের প্রতি এ হুঁশিয়ারি দেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক ভাষণে গতকাল সোমবার তিনি বলেন, হুতিদের ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করতে হবে। তারা যদি এই হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে হিজবুল্লাহ, হামাস ও সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের মতো একই ধরনের ‘শোচনীয় পরিণতি’ হবে তাদের। তেহরানের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো স্থানে হামলা চালানো সক্ষমতা রয়েছে ইসরায়েলের। ইরান–সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর হামলা সহ্য করবেন না তাঁরা।

সোমবার ড্যানি ড্যাননের এমন হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ঘোষণা দেয়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দিয়েছে তারা। ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে সাইরেন বাজতে শোনা যায়। পরে আজ মঙ্গলবার হুতিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানান, তেল আবিবের কাছে বেন গুরিওন বিমানবন্দর এবং জেরুজালেমের দক্ষিণে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র লক্ষ্য করে একটি হাইপারসনিক ও একটি ‘জুলফিকার’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে হুতিদের সুপ্রিম রেভল্যুশনারি কামিটির প্রধান মোহামেদ আলী আল–হুতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, তাঁরা ইসরায়েলে হামলা বন্ধ করবেন না। দেশটির ওপর হামলা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে গাজার প্রতি সমর্থন জারি রাখবেন তাঁরা।

‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। উপত্যকাটিতে চলমান এই সংঘাতে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে হুতি ও হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায়ই হামলা চালাচ্ছি তারা। পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ইসরায়েলও। এরই মধ্যে সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ গোষ্ঠীটির কয়েকজন নেতা নিহত হন।

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হামলার মুখে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে হামাস ও হিজবুল্লাহ। এ ছাড়া গত ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে পতন হয়েছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের। দেশটির গদিতে তাঁকে টিকিয়ে রেখেছিল রাশিয়া ও ইরান। বাশারের পতনের কৃতিত্বও দাবি করেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

হুতিদের ওপর ব্যাপক আকারে হামলা এখনো শুরু করেনি ইসরায়েল। গত সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ইয়েমেনে হুতি–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ‘হামলা শুরু করেছে’ ইসরায়েল। এ সময় ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমানবন্দর, দেশটির পশ্চিম উপকূলে বিভিন্ন বন্দর ও দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল তারা।

গত ২৬ ডিসেম্বর সানা বিমানবন্দরে ইসরায়েলের হামলার সময় সেখানে ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। পরে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে উড়োজাহাজে ওঠার সময় বোমা হামলা শুরু হয়। এতে উড়োজাহাজের এক ক্রু সদস্য আহত হন।

এদিকে সোমবারে নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েল–হুতি পাল্টাপাল্টি হামলা নিয়ে কথা বলেছেন জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সহকারী মহাসচিব খালেদ খিয়ারি। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে সামরিক সংঘাত আরও বাড়লে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এর ফলাফল বইতে হবে ইয়েমেন, ইসরায়েলসহ এ অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষকে, যার কোনো শেষ থাকবে না। পাল্টাপাল্টি হামলার জন্য ইসরায়েল ও হুতি—দুই পক্ষেরই সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়াও।