আরব নেতাদের গাজা পুনর্গঠন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল

বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন উপত্যকাটির মিসর সীমান্তবর্তী এলাকায়। দক্ষিণ গাজার রাফা এলাকায়, ৭ জানুয়ারি ২০২৪ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনে আরব নেতারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রস্তাবেই অটল রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউস এক বিবৃতিতে বলেন, (আরব নেতাদের) বর্তমান প্রস্তাবে গাজার বাস্তবতাকে আমলে নেওয়া হয়নি। বর্তমানে গাজা বসবাসের অনুপযোগী। ধ্বংসস্তূপ ও অবিস্ফোরিত জঞ্জাল থাকায় সেখানে মানুষের পক্ষে বসবাস করা সম্ভব নয়।

ব্রায়ান হিউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হামাসমুক্ত গাজাকে পুনর্গঠনের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় অটল রয়েছেন। ওই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে আমরা আরও আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী।’

আরও পড়ুন

যুদ্ধপরবর্তী গাজা পুনর্গঠনের জন্য ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করতে গতকাল মঙ্গলবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে এক জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন আরব বিশ্বের নেতারা। এতে মিসরের দেওয়া প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ‘সত্যিকার শান্তি’ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

মিসরের দেওয়া প্রস্তাবে গাজার শাসনভার অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে হস্তান্তর করতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) পুনর্গঠিত হওয়ার আগপর্যন্ত শাসনভার ওই অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে থাকবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, পুনর্গঠনের জন্য গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দাকে নিজেদের বসত-ভিটা ছাড়ার দরকার নেই।

ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিসরে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছিল। ইসরায়েল–সমর্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সেই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছিল, গাজাকে পুনর্গঠিত করে মধ্যপ্রাচ্যের ‘নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্রে’ পরিণত করা হবে। উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ থাকবে ওয়াশিংটনের হাতে।

দক্ষিণ গাজায় বাজার করছেন এক ফিলিস্তিনি নারী। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে উপত্যকাটিতে নিত্যপণ্যের দাম এখন বেড়েছে, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

গতকাল কায়রোর বৈঠকে পিএর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ‘পরিবেশ অনুকূলে আসার পর’ পশ্চিম তীর, গাজা এবং অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দেন। পূর্ব জেরুজালেমে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রায় দুই দশক আগে।

আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস মিসরের প্রস্তাবের প্রশংসা করেছে। নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে।

আরব নেতাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা সমর্থনের কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে যুদ্ধপরবর্তী গাজা নিয়ে এখন পর্যন্ত নিজেদের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রকাশ করেননি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল নানা সময়ে বলেছে, গাজা ও পশ্চিম তীরের শাসন তাদের হাতে থাকবে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় এই দুটি অঞ্চলকে ইসরায়েল দখল করেছিল।

ফিলিস্তিন ও আরব নেতাদের একাংশ বারবার দাবি জানিয়ে আসছে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। কিন্তু ইসরায়েল সরকার ও ইসরায়েলের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে।

গত শনিবার (১ মার্চ) ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তা নবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ জারি করেছে ইসরায়েল। ফলে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খাদ্য সরবরাহ স্থগিত করায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে। সংস্থাগুলোর অভিযোগ, এর মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।

মিসরের প্রস্তাবে গাজা পুনর্গঠনের জন্য আগামী পাঁচ বছর, তথা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। পুনর্গঠনের প্রথম পর্বে অবিস্ফোরিত জঞ্জাল ও ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা হবে। ইসরায়েলের বোমা হামলা ও সামরিক অভিযানের কারণে গাজায় পাঁচ কোটি টনের বেশি ধ্বংসস্তূপের সৃষ্টি হয়েছে।

গাজা পুনর্গঠন নিয়ে জরুরি সম্মেলনে আরব দেশের নেতারা। মিসরের রাজধানী কায়রোতে, ৪ মার্চ ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

কায়রোর বৈঠকে অধিকাংশ আরব দেশ অংশ নিলেও সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধি পাঠায়নি। অথচ গাজা পুনর্গঠনের জন্য এসব ধনী দেশের অর্থসহায়তা দরকার। অন্যদিকে ‘ভারসাম্যহীন ও ত্রুটিপূর্ণ’ মন্তব্য করে আরব নেতাদের বৈঠক বর্জন করেছেন আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি আবদেলমাজিদ তেব্বুন।

জর্ডানের কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন, কায়রোর প্রস্তাব কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে উত্থাপন করা হবে।