হুতিদের হাতে ইসরায়েলি ধনকুবেরের জাহাজ আটক কী বার্তা দিচ্ছে
লোহিত সাগরের ইয়েমেন উপকূলে গত রোববার একটি কার্গো জাহাজ আটক করে ইয়েমেনের হুতি যোদ্ধারা। তাদের দাবি, ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা থাকায় জাহাজটি আটক করা হয়েছে। এর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েলি জাহাজ আটকের ঘোষণা দিয়েছিল তারা।
‘গ্যালাক্সি লিডার’ নামের ১৮৯ মিটার দীর্ঘ একটি গাড়ি বহনকারী কার্গো জাহাজ। এটি তুরস্ক থেকে ভারতে যাচ্ছিল। এ সময় ছোট আকারের স্পিডবোট ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে হুতি যোদ্ধারা জাহাজটি আটক করেন। পরে জাহাজটি ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাহাজটি আটকের সময় কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। বেসামরিক জাহাজটি নিরপেক্ষ দেশগুলোর মধ্যে চলাচল করছিল। এরপরও এ ঘটনায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সর্বশেষ সংঘাতে মারাত্মক উত্তেজনা সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি যেটা হতে পারে, এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানকে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করতে পারে।
হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারেই বলেছেন, ‘ইসরায়েলি মালিকানার’ কারণে জাহাজটি আটক করা হয়েছে। তবে জাহাজটির সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। যদিও জাহাজ–সম্পর্কিত তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, জাহাজটির মালিক একজন ইসরায়েলি ধনকুবের।
‘গ্যালাক্সি লিডার’ নামের জাহাজটি বাহামার পতাকাবাহী। একটি জাপানি কোম্পানি জাহাজটি পরিচালনা করছে। জাহাজের মাস্টার একজন বুলগেরীয় আর নাবিকেরা অন্তত পাঁচটি দেশের নাগরিক। তাঁদের কেউই ইসরায়েলি নন।
আর ‘ইসরায়েলি সম্পৃক্ততা’ থাকলেই কি জাহাজ চলাচলের বিষয়টি হুতিদের দয়ার ওপর ছেড়ে দিতে হবে? সম্ভবত ‘না’। তবে পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ছিনতাই ঠেকানোটা তিনটি বিকল্পেই সীমাবদ্ধ। প্রথমত, বাণিজ্যিক জাহাজের পাহারায় যুদ্ধজাহাজ পাঠানো। দ্বিতীয়ত, সাগরে হুতিদের অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা ধ্বংস করা কিংবা একেবারে সীমিত করা। তৃতীয়ত, এ ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকতে রাজি করানো।
প্রথম বিকল্পের ক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, লোহিত সাগরে টহলে যুদ্ধজাহাজ পাঠাবে কে? লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী দেশ সৌদি আরব ও মিসর। দেশ দুটির শক্তিশালী ও প্রযুক্তিসম্পন্ন নৌবাহিনী রয়েছে। কিন্তু হুতিদের সঙ্গে সৌদি আরবের অস্বস্তিকর এক যুদ্ধবিরতি রয়েছে। যুদ্ধবিরতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন কিছু করতে আগ্রহী নয় সৌদি।
মিসর নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে চায়। হুতিদের সঙ্গে উত্তেজনায় দেশটি নিজেদের জড়াতে চায় না। আর এ কাজে মোতায়েন করার জন্য অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজ ইসরায়েলের হাতে নেই।
হুতি হুমকি মোকাবিলায় যে একমাত্র শক্তি বাকি থাকে, সেটা হলো যুক্তরাষ্ট্র। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অনেক সামরিক সম্পদ মোতায়েন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি রণতরী বহর—একটি ভূমধ্যসাগরে, অপরটি ওমান সাগরে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক জাহাজ পাহারা দেওয়ার মতো যুদ্ধজাহাজ সীমিত।
এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিকল্পতে যেতে হতে পারে। কিন্তু শক্তিশালী শত্রুর ওপর চড়াও হওয়ার প্রস্তুতির জন্য পরিচিতি আছে হুতিদের। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সরাসরি আঘাত করলে বড় ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হুতিদের বন্দরগুলোতে হামলা চালাতে ইসরায়েলকে বলতে পারে ওয়াশিংটন। কিন্তু এটাও ঝুঁকিপূর্ণ।