বাশারের ভাগ্যে কী ঘটেছে

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদফাইল ছবি: এএফপি

সশস্ত্র বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে সিরিয়ার দুই যুগের স্বৈরশাসক বাশার আল–আসাদের পতন হয়েছে। বিদ্রোহী যোদ্ধারা রাজধানী দামেস্কে ঢোকার আগেই বাশার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে। তবে তিনি কোথায়, বেঁচে আছেন কি না—সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সিরিয়ায় ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের ওপর নজর রাখা যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, সিরিয়ার ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে চেপে দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন বাশার। তবে উড়োজাহাজটির গন্তব্যের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বাশার আল-আসাদ কোথায়, তাঁর পরিণতি কী হয়েছে জানা না গেলেও, তিনি সম্ভাব্য তিন দেশে যেতে পারেন বলে ধারণা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদেল রহমানের। তাঁর মতে, বাশারের সম্ভাব্য প্রথম গন্তব্য হতে পারে রাশিয়া। কারণ, রাশিয়ার সামরিক, রাজনৈতিক আর কূটনৈতিক সহায়তার ওপর ভর করেই মূলত তিনি এত দিন ক্ষমতায় টিকে ছিলেন।

রাশিয়ায় না গিয়ে থাকলে বাশার তাঁর আরেক মিত্রদেশ ইরানে যেতে পারেন বলে মনে করেন রামি আবদেল রহমান। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাশারকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল তেহরান। এর পাশাপাশি বাশার সরকারের নিয়ন্ত্রিত সরকারি বাহিনীর সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করতে ইরান–সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের সিরিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।

রামি আবদেল রহমানের মতে, বাশারের জন্য তৃতীয় বিকল্প গন্তব্য হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। কারণ, প্রথম উপসাগরীয় আরব দেশ হিসেবে ২০১৮ সালে সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করেছিল আমিরাত। আরব বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বিরুদ্ধে অন্য দেশের মতো ২০১১ সালে সিরিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এর জেরে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে উপসাগরীয় দেশগুলো দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।

এদিকে সিরিয়ার দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে। বাশার হয়তো নিহত হয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ চলাচলের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখে ফ্লাইটরাডার২৪। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি উড়োজাহাজ প্রথমে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে যায়। সেখান থেকে পরে আবার উল্টোপথে যাওয়া শুরু করে। এর কয়েক মিনিট পর সেটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে উড়োজাহাজটিতে বাশার ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স।

এ ছাড়া দামেস্ক বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়া উড়োজাহাজটি বিদ্রোহীরা ভূপাতিত করেছেন বলেও খবর বের হয়েছে। সিরিয়ার দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে বাশারের নিহত হওয়ার বড় আশঙ্কা আছে। উড়োজাহাজটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া সে ইঙ্গিতই দেয়।

তবে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওই এলাকাতে কোনো উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

এদিকে বাশারের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বাশার প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিয়ে দেশত্যাগে সম্মত হন। তবে তিনি কোন দেশে গেছেন বা কোথায় অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি মস্কো। রাশিয়া এটাও বলছে, সিরিয়ার বাশারবিরোধী পক্ষগুলোর সঙ্গে মস্কো যোগাযোগ রাখছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বাশারের পতনের তাঁর আরেক মিত্র ইরান এক বিবৃতিতে বলেছে, সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও দেশটির মানুষের ঐক্যের প্রতি সম্মান রয়েছে তেহরানের। দেশটিতে দ্রুত সামরিক সংঘাতের অবসান, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দমন এবং সমাজের সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে ইরান। তবে বাশার আল–আসাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সে বিষয় কিছু উল্লেখ করেনি দেশটি।