ইরানে মেয়েদের স্কুলে আবারও বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ, অভিভাবকদের বিক্ষোভ
ইরানে আবারও মেয়েদের স্কুলে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দেশটির ১০টি প্রদেশের ৩০টির বেশি স্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমেছেন উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা।
গতকাল রাজধানী তেহরানসহ অন্য শহরগুলোতেও এ বিক্ষোভ শুরু হয় বলে দেশটির সংবাদ সংস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওর মাধ্যমে জানা গেছে।
গত তিন মাসে ইরানজুড়ে স্কুলছাত্রীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের শত শত ঘটনার খবর এসেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, মেয়েদের স্কুলগুলো জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা হতে পারে এটি।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেয়েদের ‘হালকা বিষ’ প্রয়োগ করা হয়েছে। কিছু কিছু রাজনীতিক বলছেন, মেয়েদের শিক্ষার বিরোধিতাকারী কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুলরেজা রহমানি ফাজলি গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ ঘটনায় তদন্তকারীরা ‘সন্দেহজনক নমুনা’ পেয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অসুস্থতার কারণ জানতে তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর ফল দ্রুত প্রকাশ করা হবে।
গতকালও ১০টি প্রদেশের ৩০টির বেশি স্কুলে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এ-সংক্রান্ত ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, এ ঘটনা জানার পর সন্তানদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলের সামনে জড়ো হয়েছেন অভিভাবকেরা। কাউকে কাউকে আবার অ্যাম্বুলেন্স বা বাসে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
রয়টার্সের যাচাই করা আরেকটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, এ ঘটনার পর গতকাল তেহরানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন অভিভাবকেরা। এ বিক্ষোভ পরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হয়।
গেহরান ছাড়াও ইসফাহান, রাসত শহরসহ অন্যান্য এলাকাতেও এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল বলে আরেকটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে; যদিও এটি যাচাই করা যায়নি।
ইরানের কঠোর পর্দাবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের হেফাজতে ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। মাসার মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভকারীরা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও নারী অধিকার দাবি করেন। বিক্ষোভ রুখতে দমনপীড়ন চালায় ইরান সরকার। এখন মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধে বিষপ্রয়োগের বিষয়টি সামনে এল।
সাম্প্রতিক দিনগুলোয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিও চিত্রগুলোয় দেখা গেছে, স্কুলে মেয়েরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তারা বমি বমি ভাব অনুভব করছে এবং হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ শুধু মাথাব্যথার অভিযোগ করেছে। এসব ভিডিও যাচাই করা যায়নি।
ইরানের পার্লামেন্টের স্বাস্থ্য কমিটির মুখপাত্র জাহরা শেখ গত বুধবার বলেছিলেন, গত বছরের নভেম্বরে থেকে রহস্যময় এ বিষক্রিয়ার ঘটনা শুরু হলে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে শ্বাসকষ্টের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৮০০ জনই তেহরানের দক্ষিণে পবিত্র কোম শহরের।
এসব ঘটনায় গত শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্কুলছাত্রীদের ওপর এমন হামলার স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এবং জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে ইরান এ ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ঘটনার কারণ অনুসন্ধান চলছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইরান সরকারের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকারের মধ্যে একটি হলো এ সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করা, পরিবারের উদ্বেগ নিরসনের জন্য নথিভুক্ত তথ্য সরবরাহ এবং অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা।