গাজায় এখন গুলি–বোমার চেয়ে ইসরায়েলের চাপানো ‘ক্ষুধায়’ বেশি মরছে মানুষ

দক্ষিণ গাজার রাফা এলাকায় ত্রাণের খাবার সংগ্রহ করে ফিরছে ফিলিস্তিনি শিশুটি। ৫ মার্চ ২০২৪, গাজাছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় এখন ইসরায়েলের ছোড়া গুলি ও বোমার চেয়ে দেশটির ইচ্ছাকৃতভাবে চাপিয়ে দেওয়া ক্ষুধায় বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন ‘খাদ্য অধিকার’বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত মাইকেল ফখরি।

জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত আরও বলেন, গাজায় দুর্ভিক্ষজনিত ক্ষতির রেশ টানতে হবে ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ কয়েক প্রজন্মকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় খাদ্যের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিষক্রিয়ায় কৃষিজমি অনাবাদি করে ফেলা এবং খেতখামার, বন্দর ও মাছধরা নৌযানগুলো ধ্বংস করা। এতে গাজার পুরো জনগোষ্ঠী মানবিক ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

গাজার ক্ষুধা পরিস্থিতি নিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক নতুন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মাইকেল ফখরি। এরপর তিনি ওই মন্তব্য করলেন।

গাজার সমগ্র জনগোষ্ঠী বা এর অংশবিশেষকে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে ইসরায়েল কীভাবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করছে, সে বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন বিশেষ দূত।

মাইকেল ফখরি বলেন, ‘যুদ্ধ–পরবর্তী ইতিহাসে কখনো কোনো জনগোষ্ঠীকে এত দ্রুত ক্ষুধার সম্মুখীন ও তীব্র ক্ষুধায় পতিত হতে দেখা যায়নি; যেমনটা ঘটেছে গাজায় বসবাসরত ২৩ লাখ মানুষের ক্ষেত্রে।’

ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর এ উপত্যকায় ৩৪ ফিলিস্তিনি না খেয়ে মারা গেছেন বলে এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাদের বেশির ভাগই শিশু।

আরও পড়ুন

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় খাদ্যের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিষক্রিয়ায় কৃষিজমি অনাবাদী করে ফেলা এবং খেতখামার, বন্দর ও মাছধরা নৌযানগুলো ধ্বংস করা। এতে গাজার পুরো জনগোষ্ঠী মানবিক ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজাবাসীর এই নির্ভরশীলতা পুঁজি করে তাঁদের ক্ষতি করতে ও মেরে ফেলতে রাজনৈতিক ও সামরিক অস্ত্র হিসেবে মানবিক ত্রাণ ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে মানবিক ত্রাণ প্রবেশে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

গাজায় দুর্ভিক্ষজনিত ক্ষতির রেশ টানতে হবে ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ কয়েক প্রজন্মকে।
মাইকেল ফখরি, জাতিসংঘের বিশেষ দূত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ফখরি বলেন, গাজাবাসীকে ক্ষুধায় মেরে ফেলার ইসরায়েলি কৌশলের শুরু ৭ অক্টোবরের অনেক আগে থেকেই। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, গাজায় খাদ্য প্রবেশে দেশটি বাধা দেওয়া শুরু করে সেই ১৯৯১ সালে আর ২০০০ সাল থেকে উপত্যকাটি পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রেখেছে তারা।  এ অপতৎপরতা এখন শুধু গাজাতেই সীমাবদ্ধ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন

জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেন, গত ৭০ বছরের বেশি সময় ধরেই ফিলিস্তিনিদের খাদ্যব্যবস্থা ধ্বংস করে আসছে ইসরায়েল। এ সময়ের মধ্যে দেশটি তাঁদের বাগান ও খামার ধ্বংস করেছে। এ ছাড়া হয়রানি বা হত্যা করেছে কৃষক, জেলে ও মেষপালকদের। নিজ বাড়িঘর ও এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করার লক্ষ্যে ইসরায়েলি চেষ্টার অংশ তাঁদের (ফিলিস্তিনি) ক্ষুধায় রাখার এ কৌশল।

প্রতিবেদনে ফখরি গাজার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিকে নিখাদ মানবিক সমস্যার চেয়ে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এক্সে বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘(ফিলিস্তিনবাসীকে) ক্ষুধায় রাখার বিষয়টি সব সময়ই ইচ্ছাকৃত, আন্তর্জাতিক, কাঠামোগত ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত বলেন, এ সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসরায়েলের ওপর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবরোধ আরোপ করা।

আরও পড়ুন

জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছে যে গাজা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ব সংস্থা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি।

গত জুলাই মাসে জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় ১০ জন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিকভাবে ও নিশানা করে ক্ষুধার প্রচারণায় যুক্ত রয়েছে।’ মাইকেল ফখরি এ বিশেষজ্ঞদের একজন।

এই বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছিলেন, গাজার খান ইউনিস ও দেইর আল–বালাহ শহরে গত মে মাসের শেষ দিক থেকে ১৩ বছর, ৯ ও ৬ মাসের তিন শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। এ ঘটনা এটিই বলছে, গাজা দুর্ভিক্ষে পড়ার মুখে রয়েছে।

আরও পড়ুন