ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা
ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দুজন কর্মকর্তা সিবিসি নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এসব হামলায় কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এ হামলাকে গত রোববার সিরিয়ার সীমান্তের কাছে জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। সামরিক ঘাঁটিতে ওই হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হন এবং আহত হন ৪১ জন।
ওই হামলার জন্য ইরান–সমর্থিত একটি সশস্ত্র গ্রুপকে দায়ী করে আসছিল ওয়াশিংটন। এর জবাবে সিরিয়া ও ইরাকে অবস্থিত ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় ধারাবাহিকভাবে হামলা চালানোর পরিকল্পনায় অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কবে থেকে হামলা শুরু করা হবে, তা স্পষ্ট করে না জানালেও একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছিলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে হামলা চালানো হবে। বিষয়টি আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
বিবিসি জানিয়েছে, সিরিয়া ও ইরাকে থাকা ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) এলিট বাহিনী কুদস ফোর্স এবং তাদের সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাতটি স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এর মধ্য চারটি স্থাপনা সিরিয়ায়, তিনটি ইরাকে। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ৮৫টি। এ ছাড়া লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, সামরিক রসদভান্ডার এবং ড্রোন স্টোরেজ ইউনিট।
হামলায় বেশ কয়েকটি মার্কিন যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল দূরপাল্লার বি১ বোমারু বিমান, এটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল। ৩০ মিনিটের মধ্যে একযোগে এ হামলাকে সফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছেন মার্কিন জেনারেল ডগলাস সিমস। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে বিমান হামলা চালানো কঠিন ছিল। গতকাল শুক্রবার পরিস্থিতি বদলে যায়। যেসব লক্ষ্যে আঘাত হানা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় সময় গতকাল বিকেলে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানান, তাঁর নির্দেশে মার্কিন বাহিনী ইরাক ও সিরিয়ায় আইআরজিসি ও তাদের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এসব স্থাপনা মার্কিন বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করা হতো। বাইডেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া আজ (শুক্রবার) শুরু হয়েছে। এটা আমাদের পছন্দমতো সময়ে এবং পছন্দমতো জায়গায় চলতে থাকবে।’
বিবৃতিতে বাইডেন এটাও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের অন্য কোথাও কোনো সংঘাত চায় না। তবে সবাইকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের সবার জানা দরকার, আপনি যদি একজন আমেরিকানের ক্ষতি করেন, তবে আমরা এর জবাব দেব।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর ওপর হামলা সহ্য করা হবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের সামরিক বাহিনী এবং আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে এ ধরনের হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরাকের সেনাবাহিনী। দেশটির সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এর ফলে বাগদাদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইরাকের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহইয়া রসুল।
তবে যুক্তরাষ্ট্র তরফ থেকে বলা হয়েছে, ইরাককে জানিয়েই দেশটির বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।