যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও লেবাননে ইসরায়েলের হামলা চলছেই, এক দিনে নিহত ৯২
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর দেশের সেনাবাহিনীকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘পূর্ণ শক্তি’ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন। লেবাননে যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য মিত্রদের আহ্বান সত্ত্বেও এ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৯২ জন নিহত হয়েছে।
গত সোমবার থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। গত সোমবার থেকে লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। এমন অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংঘাত নিরসনে সমাধানের পথ বের করতে গত বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ১১টি দেশ ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে তিন সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রস্তাব দেয়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি দূত ড্যানি ড্যানন শুরুতে প্রস্তাবটি প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর দেশ একে স্বাগত জানায়। তাঁর মন্তব্যের পর প্রস্তাবটি আশার আলো দেখতে পেয়েছিল।
তবে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা প্রত্যাখ্যান করেন। এদিন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পর নেতানিয়াহু বলেন, সব লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লেবাননে ইসরায়েল থামবে না। এসব লক্ষ্যের মধ্যে প্রধান একটি লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের নিরাপদে তাঁদের বাড়িতে ফেরা নিশ্চিত করা।
হোয়াইট হাউস পরে বলেছে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ইসরায়েলের সঙ্গে ‘সমন্বিতভাবে’ করা হয়েছে।
নিউইয়র্কে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার লেবাননে সংঘাত নিরসনে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বলেছেন, এ সংঘাত ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ এক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
প্রায় এক বছর আগে গাজায় শুরু হওয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যেও উত্তেজনা ছড়ায়। তখন থেকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, লেবাননে গত সোমবার থেকে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ আগেই বাস্তুচ্যুত ছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বৃহস্পতিবার তারা লেবাননের দক্ষিণে এবং দেশটির পূর্বে বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তারা লেবানন ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী অবকাঠামোতেও হামলা করেছে। ইসরায়েলের দাবি, হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করতে ওই সব হামলা চালিয়েছে তারা।
ইতিমধ্যে হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা কিরইয়াত আতা বসতি লক্ষ্য করে ৫০টি রকেট এবং সাফেদ শহর লক্ষ্য করে ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। দুটো এলাকাই ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলাজনিত সতর্কসংকেত বাজার পর তারা এটি প্রতিহত করে।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেরজি হালেভি বুধবার বলেছেন, লেবাননে বিমান হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলে প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ‘শত্রুপক্ষের এলাকায় প্রবেশের’ পথ তৈরি হবে।