গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন
ঈদেও থেমে নেই হামলা, গাজায় নিহত অন্তত ৮০
পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসবের আবহেও গাজাবাসীর দুর্দশা কাটেনি। হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের মধ্যে চলছে উৎসবের আবহ; কিন্তু আনন্দের এই উপলক্ষও গাজার ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কাটাতে পারেনি। ঈদের সময়েও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ঈদ ও এর পরদিন গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৮০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গত রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়েছে। উৎসবের এ দিনটি মুসলিমরা কাটান তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গে; কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের এবারের ঈদও কেটেছে নিরানন্দ ও মৃত্যুভয়ে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ গাজায় আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেওয়া হালনাগাদ তথ্যে জানায়, এর আগের ৪৮ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০৫ জন। এর মধ্যে ঈদের দিন অর্থাৎ গত রোববার নিহত হয়েছেন ৫৩ জন এবং আহত হয়েছেন ১৮৯ জন।
টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর নতুন করে ১ হাজার ১ জন নিহত ও ২ হাজার ৩৫৯ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর ৫০ হাজার ৩৫৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। আহত ১ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ জনের বেশি। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
প্রায় ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হলে কিছুটা স্বস্তি ফেরে গাজায়। এরপর ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন ফিলিস্তিনিরা। ধ্বংসযজ্ঞ ঠেলে নতুন করে ঘর গড়তে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করলে ফের বিপর্যয় নেমে এসেছে ফিলিস্তিনিদের জীবনে। আবারও বাড়িঘর ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
নির্বিচার হামলা
ঈদ উপলক্ষে গাজায় ইসরায়েল হামলায় লাগাম টানতে পারে ধারণা করা হলেও গত দুই দিনে হামলার তীব্রতা আরও বেড়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন গতকাল ভোর থেকেই গাজাজুড়ে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। দিনভর থেমে থেমে উপত্যকাটির বিভিন্ন এলাকায় হামলা চলে। পাশাপাশি ইসরায়েলির সেনারা কামান থেকে বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণও করেন।
গতকাল সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে। এদিন খান ইউনিসের অন্তত সাতটি এলাকায় বিমান থেকে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এ ছাড়া গাজার মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত, মাগাজিসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হয়েছে। দেইর আল–বালাহতেও একাধিক বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীরা বলছেন, নির্বিচার হামলার মধ্যে মরদেহ উদ্ধারের অভিযান চালানোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
দক্ষিণ গাজায় রাফার কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত আটজন চিকিৎসক, পাঁচজন বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মী ও জাতিসংঘের একজন কর্মীসহ জরুরি সেবাদানের কাজে নিয়োজিত ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিস (আইএফআরসি) এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, ২০১৭ সালের পর বিশ্বের যেকোনো জায়গায় তাদের কর্মীদের ওপর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
গাজার গণমাধ্যম কার্যালয়ের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে জরুরি সেবা বিভাগের এসব কর্মীকে হত্যা করা হয়। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে হাতকড়া পরিয়ে খুব কাছ থেকে মাথায় ও বুকে গুলি করেন ইসরায়েলি সেনারা।
ওই হত্যার পর ইসরায়েলি সেনাদের বাধায় আট দিন এই ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। এই হামলার জন্য অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গাজার গণমাধ্যম কার্যালয় বলেছে, প্রয়োজনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ডের একটি তদন্ত করতে হবে। এ ছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং গাজার চিকিৎসাকর্মী ও জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।